মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান ‘চরমপত্র’-এর কথক এম. আর আখতার মুকুল এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ আগস্ট বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের অন্তর্গত চিংগাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মুস্তাফা রওশন আখতার মুকুল। পিতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক সা’দত আলি আখন্দ, মাতা রাবেয়া খাতুন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং এ কারণে তাকে একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে। ১৯৪৮-৪৯ খ্রিষ্টাব্দে জেল থেকেই স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবিকার জন্য তিনি বিমা কোম্পানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে সাংবাদিকতার পেশায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও পূর্বদেশ পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস অব পাকিস্তান (ইউপিআই)-এর ঢাকা ব্যুরো প্রধান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গন পরিদর্শন শেষে তার রচিত এবং স্বকণ্ঠে প্রচারিত ‘চরমপত্র’ অনুষ্ঠানটি ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে তাকে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ চাকরি হারিয়ে অনেক বছর তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। এ সময় জীবিকার তাগিদে তাকে পোশাকপ্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র সম্পাদনার দ্বিতীয় পর্যায়ে কিছুদিন কাজ করেছেন। পরে তিনি ঢাকায় সাগর পাবলিশার্স নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
এ সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার রচিত ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পল্লী এক্সপ্রেস, রূপালী বাতাস, রূপালী বাতাস সোনালী আকাশ, মুজিবের রক্তলাল, ভাসানী মুজিবের রাজনীতি, পঞ্চাশ দশকে আমরা ও ভাষা আন্দোলন, চল্লিশ থেকে একাত্তর, আমি বিজয় দেখেছি, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, লন্ডনে ছক্কু মিয়া, ওরা চারজন, কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি, বায়ান্নোর জবানবন্দী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, ১৯৮৭), লেছড়াগঞ্জের লড়াই, নকশালদের শেষ সূর্য, একাত্তরের বর্ণমালা, বিজয় ’৭১, আমিই খালেদ মোশাররফ, মহাপুরুষ, একুশের দলিল, দুমুখী লড়াই: আমরাই বাঙালী ইত্যাদি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।