রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনে প্রায়ই আড্ডা দিতো এলাকার উঠিত বয়সি তরুণদের দুটি গ্রুপ। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী মুশফিক তাজুন (১৮) ছিলেন জুনিয়র গ্রুপের সদস্য। নাহিদ, শান্ত ও সাকিব গ্রুপ ছিল সিনিয়র। আড্ডা দেয়ার ফাঁকে এসব গ্রুপ সিনিয়র-জুনিয়র দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়ে। এক গ্রুপের সদস্যরা অন্য গ্রুপের সদস্যদের গালিগালাজও করে। তবে তা বহু আগে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গত বুধবার সন্ধ্যায় জুনিয়র গ্রুপের সদস্য এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী মুশফিক তাজুনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন সিনিয়র গ্রুপের সদস্যরা।
এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাহামুদুল হাসান নাহিন, ইয়ানুর রহমান শান্ত ও নাজমুস সাকিব। গতকাল বৃহস্পতিবার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে তাদের একদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর বুধবার গভীর রাতেই যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের দুলাভাই মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যামামলা করেন। অন্য আসামিরা হলেন- শফিক ওরফে হাতভাঙা শফিক, মাহফুজ, সায়েম, মাইনুল বিশাল, আবির, মোবাশ্বের ভূইয়া, অপূর্ব রায়, শাহরিয়া মুশফিক, মেশকাত, আদনান, তন্ময়, নাঈম, সাগর ও ইমনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ১৯ এর মধ্যে।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুল আলম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, নিহত তাজুন গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে তাদের ঝগড়া হয়েছিল। তখন তাজুন তাদের গালিগালাজ করে। এ কারণে তাজুনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে তাজুনকে হারিয়ে শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা পপি বেগম। তাজুনের বাবা মোশারফ কাতারপ্রবাসী। ঘটনার পর তাজুনের মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে মোশারফকে দ্রুত দেশে আসতে বলেন স্বজনরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে তিনি ছেলের লাশ দেখতে পান। এ সময় কান্নায় তিনি ভেঙে পড়েন। স্বজনরা তাকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছিলেন না।
তাজুনের চাচা মানিক হোসেন বলেন, তাজিন বুধবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায়ই ছিল। সন্ধ্যার পর শাওন নামের একটি ছেলে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো চাপাতি, চাকু, ছুরিসহ লাঠিসোটা নিয়ে তাজুন ও তার বন্ধুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। দনিয়া কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে ৪নং আসামি ধারালো ছুরি নিয়ে তাজুনের বাঁ পাশে বুকের নিচে ছুরিকাঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে তার বন্ধুসহ অন্য পথচারীরা দনিয়ার সালমান হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাজুন পরিবারের সঙ্গে জুরাইনের মুরাদপুর মাদ্রাসা রোডের ৮২/২ বাসায় থাকতেন। ময়নাতদন্তের পর গতকাল তার মরদেহ নেয়া হয় যাত্রাবাড়ীতে। সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুরের দিকে গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর শ্রীনগরে নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।