পেশায় প্রেসের কর্মচারী হলেও স্থানীয়দের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডির সমস্যা সমাধান করে ‘মাস্টার’ উপাধি পেয়েছেন। আর এই যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে অভিনব প্রতারণায় নামেন আনোয়ার হোসেন (৩০)। পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নামে ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ খুলে শত শত নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রতারণা করে আসছিলেন।
ঢাকার তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের নামে আইডি খুলে ৭৭১ নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আপত্তিকর ছবি আদান-প্রদান করেন। নারীদের কয়েকজন তেজগাঁও থানায় হাজির হয়েছিলেন সেই ‘ওসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। তখনই বিষয়টি’র আঁচ পান থানার ওসি মহসিন। নিজে বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্তে নেমে গাইবান্ধা জেলার সদর থানার স্টেশন রোডের দাশ বেকারি মোড়ের ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আনোয়ারকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ১টি কম্পিউটার, আইপি ক্যামেরা, রাউটার ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আনোয়ার মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও ইন্টারনেট, ফেসবুকসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে শিখে ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।
স্থানীয় অনেকের ফেসবুক আইডির সমস্যার সমাধান করে দেয়ায় তাকে ‘মাস্টার’ নামেও ডাকা হতো। আর এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তি, মন্ত্রী, পুলিশ কর্মকর্তা, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে তাদের নামে ফেসবুক আইডি খুলতো। এরপর বিভিন্ন নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে আপত্তিকর ছবিসহ টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতো।
তিনি বলেন, আনোয়ারকে গ্রেফতারের পর তার কম্পিউটার ও মোবাইলে রাষ্ট্রপতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান, তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, চিত্রনায়ক শান্ত খান, অভিনেতা ও মডেল আব্দুন নুর সজল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামের ফেসবুকের আইডি পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কখনো ওসি, নায়ক, জনপ্রতিনিধি সেজে মেয়েদের সঙ্গে চ্যাটিং করতো। ভুয়া আইডি খুলে এ পর্যন্ত সে সাড়ে ৭শ’র বেশি নারীর সঙ্গে কথা বলেছে। শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী, মডেল সবাই আছেন তার এই তালিকায়। ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার পরে হোয়াটসঅ্যাপেও তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। কথা বললেও কারও সঙ্গে ভিডিও কলে আসতো না। আবার কেউ তাকে দেখতে চাইলে কিংবা সন্দেহ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ব্লক করে দিতো। সে মূলত মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতো। এদের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে ছবিও আদান প্রদান করেছে। আবার কারও কারও কাছে টাকাও দাবি করেছে।