রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (২৩ অক্টোবর) দিনভর পদবঞ্চিতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করেছেন। পরে রাতে বঙ্গবন্ধু ও মাদারবখশ হলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিকট শব্দে ককটেল বিষ্ফোরণে কেঁপে উঠে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর দলীয় টেন্টে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া শাহিনুল ইসলাম নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও সেখান থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার দিনভর পদবঞ্চিতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করেছেন। রাতে বঙ্গবন্ধু ও মাদারবখশ হলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিষ্ফোরণ করা হয়েছে। আগের দিন রোববার নতুন সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। আগের কমিটির সহ-সম্পাদক আরব হোসেনকে মারধর করেন সাবেক সহ-সভাপতি কাজী লিংকন। পরে রাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলের সামনে একাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ করা হয়।
মাদার বখশ হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, রাতের খাবার খেয়ে হলের দিকে ঢুকছিলাম। এমন সময় কয়েকটা বাইকে ২০/২৫ জন এসে ককটেল বিষ্ফোরণ করলো আমার সামনেই। তারপর থেকেই কিছুটা ভয়ের মধ্যে আছি।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর (শনিবার) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ্ হলে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের ২১৫ নম্বর কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে সোমবার কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, কমিটি গঠনের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন সভাপতি-সেক্রেটারির কোনো শোডাউন দেখা যায়নি। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এখনো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেননি। নিজের কক্ষ ভাঙচুর করা হলেও এখনো মুখ খোলেননি আসাদুল্লা-হিল-গালিব। গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে বলেন, সাংগঠনিক সব কাজ শেষ। শিগগিরই ক্যাম্পাসে ঢুকব। পদবঞ্চিত নেতাদের অবস্থান প্রসঙ্গে নতুন এই সভাপতি বলেন, আমাদের অভিভাবক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ভাইয়ের সম্মতিতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চমৎকার একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। কিছু বিতর্কিত, পথভ্রষ্ট ছাত্রলীগের নেতা আমাদের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তারা নবগঠিত কমিটিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কে?
তবে পদবঞ্চিত নেতা শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেছেন, আমরা অবস্থান নিয়েছি, বিতর্কিত এই কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই কমিটিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত ঘোষণা করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি প্রদান করতে হবে।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানের ফলে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। সোমবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থানে আছি। বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে। আমরা সতর্ক আছি যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।