আয়কর আইন ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২ নম্বর আইন)-এর ১৬৭ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে: শুধু সঞ্চয়পত্র ক্রেতারাই নন, ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পত্তির মালিকদেরও আবশ্যিকভাবে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। একটি সাধারণ, অন্যটি সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি। আপনি যদি রিটার্ন ফরমে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিটি উল্লেখ না করেন, তবে আপনার রিটার্নটি সাধারণ পদ্ধতির আওতায় দাখিল হয়েছে বলে গণ্য হবে।
সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলে আয়ের সমর্থনে যথোপযুক্ত প্রমাণ ও তথ্য রিটার্নে জমা না দিলে করদাতার শুনানির মাধ্যমে আইনে মামলা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। অন্যদিকে সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে করদাতা নিজের আয় নিজে নিরূপণ করে রিটার্ন দাখিল করেন। তাই বিনা প্রশ্নে আয়কর কর্তৃপক্ষ রিটার্নটি জমা নেয়।
তবে এ রিটার্নেও আপনাকে দাখিল করতে হবে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য। রিটার্নে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য-প্রমাণ থাকলে করদাতাকে আলাদাভাবে ঝামেলায় পড়তে হয় না।
আয়কর রিটার্নে সম্পত্তির হিসাব নিজে সঠিকভাবে দেখাতে পারলে নির্দিষ্ট ফরমটি নিজে পূরণ করে সরাসরি কর অঞ্চলে গিয়ে অথবা অনলাইনে দাখিল করতে পারেন। আর যদি সম্পত্তির হিসাব সঠিকভাবে রিটার্ন ফরমে দেখাতে না পারেন, তবে একজন ট্যাক্স ও রিটার্ন বিষয়ের আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী রিটার্ন ফরমটি দাখিল করুন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যাবলি নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। ব্যক্তিকরদাতাকে সরকার নির্ধারিত কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম রয়েছে।
সাধারণত প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কর বছরের রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ হলো আগামী ৩০ নভেম্বর।
প্রত্যেক শ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা রয়েছে। দেশব্যাপী ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে অফিস চলাকালীন নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায়। এসব কর অঞ্চলে করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও দেয়া হয়।
একেক শ্রেণির করদাতার জন্য নির্ধারিত ভিন্ন ভিন্ন রিটার্ন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে এবং যাবতীয় ও প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র এবং ব্যাংক ড্রাফটসহ কর সার্কেল অফিসে ব্যক্তি নিজেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
আপনার জেনে রাখা ভালো, যারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর বিবরণী দাখিল করতে পারবেন না, তাদের অতিরিক্ত সময়ের জন্য নির্ধারিত হারে জরিমানা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে এই জরিমানা মওকুফের জন্য করদাতা আইনের সুবিধাও নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, যারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন না এবং সময় বৃদ্ধির আবেদনও করবে না, শুধু তাদেরই জরিমানাসহ আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-এর-৭৩এ সেকশন অনুযায়ী, মাসিক ভিত্তিতে এই জরিমানার হার হবে ২%।
তাই জরিমানার ঝামেলায় না গিয়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে চেষ্টা করুন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আয়কর মেলা। এ মেলার দিন থেকে ৩০ নভেম্বরের যে কোনো একটি দিনকে বেছে নিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য।