বাধ্যতামূলক রিটার্নের আওতায় আসছে ট্রাস্টের আয়। ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু করতে হবে। সেইসঙ্গে রিটার্ন দাখিল ও যাচাই করার বিধান আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নামে ট্রাস্ট গঠন করে নিজস্ব আয় গোপন করে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করে। ফলে ট্রাস্ট রিটার্ন দাখিল করে না। ট্রাস্ট এবং ট্রাস্টজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর ফাঁকির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এসব কর ফাঁকি বন্ধে আগামী বাজেটে আসছে নতুন বিধান। এই নিয়মে ট্রাস্টগুলোকে নিয়মিতভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের বিধান পরিপালন করতে হবে। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটে ট্রাস্টের রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাস্ট এবং ট্রাস্টজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক লেনদেনের বিষয়াদি নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট করে কোনো এজেন্সি না থাকায় ট্রাস্টের অর্থ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচারে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী বাজেটে ট্রাস্টের আয়ের বিপরীতে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন এনবিআরের এ কর্মকর্তা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় আয়করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে এনবিআর ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সঙ্গে যৌথভাবে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) চালুর বিষয়টিও কর আহরণ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবার বিপরীতে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) সনদের পরিবর্তে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাই ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্য দিয়েছে। বর্তমানে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির শর্ত মোতাবেক ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের জুনের মধ্যে এনবিআরকে সে অনুপাত ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে। আয়কর থেকে আগামী তিন অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সংস্কার ও পদক্ষেপের বিষয়েও আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। গত কয়েক বছরে রাজস্ব আহরণে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তাই আইএমএফের প্রোগ্রামের আওতায় বাড়তি রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এনবিআর কিছু সংস্কার পদক্ষেপ নিলেই তা পূরণ করা সম্ভব। আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে প্রাথমিক কাঠামো দাঁড় করা হয়েছে বলেও আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে রয়েছে ই-পেমেন্ট, ই-রিটার্ন ফিলিং, ই-টিডিএস, ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ই-টিআইএন সিস্টেম।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এসব পদক্ষেপে যদি যথাযথ অর্থায়ন, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও মানবসম্পদের সহায়তা পাওয়া যায়, তাহলে টেকসইভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স ও কর ফাঁকির জায়গাগুলো বের করা সম্ভব। যেখান থেকেও কর আহরণ বাড়ানো যাবে বলে মনে করে এনবিআর। পাশাপাশি ঝুঁকি বাছাই করে খাতভিত্তিক অডিটের মাধ্যমেও কর ফাঁকির জায়গা বের করা সম্ভব। কর আহরণ বাড়ানো যাবে কর প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেও।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬ রিটার্ন জমা পড়েছে। অথচ এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রিটার্ন জমা পড়েছে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ২১৫। সে হিসাবে এক বছরেরও কম সময়ে ৭ লাখের বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে।