কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ ও অনিয়মের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় এলাকাবাসী বিক্ষোভ করতে থাকলে তড়িঘড়ি করে স্কুল ছুটি দিয়ে গা ঢাকা দেন ওই শিক্ষক। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউয়িনের কয়ারপাড় বীর বিক্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মো. আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর কয়ারপাড় বীর বিক্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আমিনুল ইসলাম। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গত নয় বছর ধরে বিদ্যালয়ের টিউশন ফিসহ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন।
প্রধান শিক্ষক এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। প্রভাব খাটিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে আয়া, এমএলএসএস, পরিচ্ছন্নকর্মী ও ল্যাবসহকারী পদে নিয়োগ বাণিজ্য করেন। একই পদে একাধিক ব্যক্তির কাছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করেন। সভাপতি আব্দুল করিম মিয়ার স্বাক্ষর জাল করে গোপনে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি এমএলএসএস পদে আনিছুর রহমান, পরিচ্ছন্নকর্মী আতাউর রহমান, ল্যাব সহকারী নাজমুল হক ও আয়া পদে লুচি খাতুনকে নিয়োগ দেয়া হলে বিক্ষুব্ধ হন অন্য প্রার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে আব্দুল করিম মিয়ার স্বাক্ষর জাল করে চার পদে নিয়োগের প্রতিবাদে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার ওই চার পদে নিয়োগপত্র দেয়া হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা বিদ্যালয়ের জড়ো হতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চতুর প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম সটকে পড়েন। পরে তাৎক্ষণিক স্কুল ছুটি ঘোষণা দেয়া হলে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেন বিক্ষুব্ধরা।
স্কুলের সভাপতি ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম মিয়া বলেন, চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এর আগে আমি সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনকালে এই প্রতিষ্ঠানে কোনো পদে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়নি। আমি কোনো নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলাম না এবং কোথাও স্বাক্ষরও করিনি।
প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত এক বছর আগে এই চার পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়। সে সময় আব্দুল করিম মিয়া সভাপতি ছিলেন এবং সব কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দিন বলেন, খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।