দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ফের ক্ষমতায় গেলে কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে দলটি। স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ইশতেহার ঘোষণা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় ইশতেহারে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতায় আনা।
তরুণ ও যুবকদের জন্য ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তরুণসমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জনমিতিক পরিবর্তনে ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কমবেশি ২ কোটি। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে।
কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত করা হবে। জেলা ও উপজেলায় ৩১ লক্ষ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিত তরুণ ও যুবসমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
অনলাইন শ্রমের বাজারে বিভিন্ন পেশাদারি সেবাসমূহ যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ, পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা, পে-রোল, আইটি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ আরো নতুন নতুন ক্ষেত্র সংযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবকের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে দেশে-বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলোকে ঢেলে সাজানো হবে। যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ‘স্মার্ট ইয়ুথ হাব’ গড়ে তোলা হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেবার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে।
১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো।
৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো।
৭. নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা।
৮. সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।
৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা।
১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো
ইশতেহার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইশতেহার প্রণয়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।