ফেনীর দাগনভূঞা সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজে ছাত্রীদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে না দেয়ায় মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থীর শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে মারধর ও র্যাগিং করেছে কলেজের একাধিক বখাটে শিক্ষার্থী। যারা ওই কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সম্প্রতি ঘটা এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রোববার বিকালে কলেজ ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে দাগনভূঞা থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. হাসান ইমাম।
মামলায় এজহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছেন- দাগনভূঞা পৌরসভার অভিরামপুরের বেলায়েত হোসেনের ছেলে তৌফিক (১৮), উদরাজপুর গ্রামের মনছুরের ছেলে সোহান (১৮), একই এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে মিঠু (১৮), দাগনভূঞার চৌধুরী হাট এলাকার সামির (১৮) ও নোয়াখালীর সেনবাগের বিজয়বাগ ইউনিয়নের হামারগাঁও গ্রামের মো. হাবিবের ছেলে রানা (১৮)।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসানকে তার ক্লাসের ছাত্রীদের নম্বর সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য কলেজের একদল বখাটে শিক্ষার্থী (তৌসিফ, সোহান,মিঠু, রানা ও সামির) দীর্ঘদিন তাকে চাপ দিতে থাকে। এতে সে রাজী না হওয়ায় বখাটের দল গত ২৯শে মে দুপুরে কলেজের ৩ তলায় স্কাউট কক্ষে নিয়ে মেহেদীকে নির্যাতন শুরু করে। এ সময় তারা মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। নির্যাতনকারীরা কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মেহেদীকে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়। এ সময় তারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরে কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি টের পেয়ে এগিয়ে এলে নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করে।
এর কয়েকদিন পর নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, এজহারভুক্ত আসামিরা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।
তারা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন বিশৃঙ্খল কার্যক্রম করে আসছে। ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, কলেজের ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। অপরাধীদের কোনো দল থাকে না। আমরাও এ ঘটনায় দোষীদের বিচার চাই। সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মনজুরুল হক পাপ্পু জানান, মেহেদী হাসানকে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর মধ্যেই বিএম শাখার ছাত্র সোহানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে আমরা সকলকে চিহ্নিত করতে পারবো। দাগনভূঞা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাসান ইমাম জানান, সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজে র্যাগিংয়ের শিকার মেহেদী হাসানের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর আমরা কলেজ পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তাতক্ষণিকভাবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা কলেজ থেকে পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিরা সকলে পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ।