পুরান ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে এক ছাত্রী ছাত্রলীগ নেতার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্লীলতাহানি ও উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন। ওই ছাত্রী ঘটনার বিচার চাইলে উল্টো তাকে ডেকে নিয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। থানায় মামলা করতে গেলেও আসামির তালিকায় ছাত্রলীগের নেতার নাম থাকায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।
ঘটনার শিকার ওই ছাত্রী কলেজে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি ছাত্রলীগের একজন কর্মী। মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ছাত্রীর ভাষ্য, আশিক বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। নিজেকে খুশি করলে পদ দেওয়ারও আশ্বাস দেন। বিভিন্ন কর্মীর মাধ্যমেও তাকে একই প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি এর প্রতিবাদ করায় আশিক তার কর্মীদের মাধ্যমে তাকে ক্যাম্পাসে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। ক্যাম্পাসে তার নামে অপবাদ ছড়ান তার কর্মীরা। রাকিব নামে আশিকের এক কর্মী তাকে নিয়ে অপবাদ ছড়ান। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি রাকিবকে জিজ্ঞাসা করেন, তাকে নিয়ে কেন মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। ওই সময়ে আশিকের নির্দেশে তাকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমাকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করার পর আশিক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ খান শুভকে ক্যাম্পাসে ডেকে আনেন। এরপর কলেজের ছাত্র সংসদে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ঘটনার বিষয়টি ভুলে যেতে বলেন। ভুলে না গেলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। এরপর তাকে মারধর করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আশিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। শুধু আশিকের কর্মী রাকিবের নামে এজাহার রেখেছে। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সূত্রাপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম জানান, ‘এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন, তাই মামলা নেওয়া হয়নি। যার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক। তারা মারামারি করেছিল। অন্যরা মারামারি ঠেকিয়েছে।’
তদন্তের আগেই আশিক জড়িত কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সামান্য বিষয় নিয়ে আপনারা এত বেশি আগ্রহী কেন? কলেজে গিয়ে খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট করেন।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আশিকুল ইসলাম আশিক জানান, ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কর্মী রাকিব জড়িত। তার নামে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা, ওই মেয়ে তার ছোট বোন। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান জানান, তিনি ঘটনার সম্পর্কে অবগত। দোষীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন ঘটনার শিকার ছাত্রী।
তিনি আরও জানান, মেয়েটিকে মারধরের সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক ঘটনাস্থলে ছিল। তবে ঘটনায় জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে মেয়েটি কোনো অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার শিকার মেয়েটির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন এবং নিয়মিত তার চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন।