রাতের ঘুম শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার ফল ভালো করার জন্য দরকারি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের কার্নগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, রাতে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ঘুমায়, এমন কলেজশিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ) ভালো। শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি জিপিএ।
কলেজজীবন গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকাল। অনেকের ক্ষেত্রে কলেজজীবনেই স্বাধীনভাবে সময় কাটানোর প্রথম সুযোগ আসে। এই সময়ে পড়াশোনা, সামাজিক নানা বিষয় এবং ঘুমের মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন চলে। জীবনের এই সময়ে তিনটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষকেরা সম্মিলিতভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন, প্রথম সেমিস্টারের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের রাতের ঘুমের পরিমাণ সেমিস্টার শেষে তাদের ফলাফলের ওপর কী প্রভাব রাখে।
গবেষণার জন্য তিনটি পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬০০ শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়া হয়েছিল। ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতের কবজিতে একধরনের যন্ত্র বা ডিভাইস পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে গবেষকেরা যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফল তুলনা করে দেখেছেন।
তাতে দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থী রাতে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের ফলাফল তুলনামূলকভাবে খারাপ। রাতে এক ঘণ্টা কম ঘুমানোর সঙ্গে জিপিএ কতটা নেমে যেতে পারে, তা-ও পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা। কলেজশিক্ষার্থীদের ঘুম ও একাডেমিক ফলাফল নিয়ে এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর গত ফেব্রুয়ারির ১৩তম কার্যবিবরণীতে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে বলে আসছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং সুষ্ঠুভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ঘুমের নীতিনির্দেশনায় বলা আছে, কিশোর-কিশোরীদের রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম দরকার। গবেষকেরা অতীতে প্রাণীর ওপর করা গবেষণায় দেখেছেন, দিনের বেলায় গড়ে ওঠা স্মৃতি ঘুমের সময় দৃঢ় বা সংহত হয়। যখন ঘুমের সাধারণ ধরনে ব্যাঘাত ঘটে, তখন দিনের বেলার শিক্ষা হারিয়ে যায়। এই যুক্তি শিক্ষার্থীদের অপর্যাপ্ত ঘুম ও একাডেমিক ফলাফলের ক্ষেত্রে কতটি কার্যকর, তা গবেষকেরা দেখার চেষ্টা করেছেন।
কার্নগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, রাতের ঘুম কমিয়ে আনার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভের ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। সে কারণে ঘুমের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া দরকার।
গতকাল শুক্রবার ছিল বিশ্ব ঘুম দিবস। বাংলাদেশের বহু মানুষের ঘুমের সমস্যা আছে। একই সমস্যা আছে এ দেশের শিক্ষার্থীদেরও। কিন্তু বাংলাদেশে ঘুমকে গুরুত্ব দিয়ে বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মনিলাল আইচ। তিনি বলেন, ‘ঘুমের সমস্যা আছে এমন মানুষের চিকিৎসায় রাষ্ট্রীয় বড় উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি মানুষকে সচেতন করার কোনো প্রয়াসও চোখে পড়ে না। ঘুম নিয়ে গবেষণা, ঘুমের সমস্যা মোকাবিলায় এখনই জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া দরকার।’