নন্দীগ্রাম উপজেলায় নিয়োগের প্রায় ২ কোটি টাকা নিয়ে বগুড়াছাড়া দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই সভাপতি। একজন নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল হোসেন সবুজ; অপরজন একই উপজেলার নিমাইদীঘি আদর্শ কলেজের সভাপতি এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন মায়া। গত ২ ফেব্রুয়ারি নন্দীগ্রামে সচেতন এলাকাবাসী এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আইনাল হক জানান, নন্দীগ্রামের মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাহবুবুর রশিদ তোতা বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে থানায় দায়েরকৃত নাশকতা মামলার আসামি। তা ছাড়া সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এই অধ্যক্ষ শিবগঞ্জ উপজেলার সিহালীর পীরব ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ থেকে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। সেই ব্যক্তিকে আমাদের নেতা এবং এ কলেজের সভাপতি কামরুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ পদে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি সবকিছু জেনেও ১ কোটি টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বহিষ্কৃত শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে বসিয়েছেন। ওই অধ্যক্ষ ও সবুজকে গভর্নিং বডি থেকে অপসারণসহ তিন পদে কোটি টাকা নিয়োগবাণিজ্যের ব্যাপারে তদন্ত দাবি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
পীরব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাসিমা আকতার জানান, উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর পীরব কলেজেও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের আবেদন করেছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত চিঠিতে মাহবুবুর রশিদের টাকা আত্মসাৎ করাসহ অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি কামরুল হাসান সবুজ জানান, অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের জন্য তার বিষয়টি এভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। তা ছাড়া নিয়োগের সময় কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। এ জন্য বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ সাজানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই বাইরে আছেন। টাকার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে নন্দীগ্রাম নিমাইদীঘি আদর্শ কলেজে ৪টি পদে আরও ১ কোটি টাকার নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে কলেজের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছাদ্দেক হোসেন মায়া ও অধ্যক্ষ ওসমান গনির বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনরোষের কারণে তারা এক মাস কলেজেই আসছেন না। বাড়িতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় অধ্যক্ষের রুম বন্ধ। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ জানান, ব্যক্তিগত কারণে কলেজে আসছেন না। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দলীয় কাজে ঢাকায় আছেন। পরে কথা বলবেন।
কলেজটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৫ সালে কলেজটির সংস্কার করা হয়। দীর্ঘদিন থেকেই জনবল নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি নাম সর্বস্ব দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা এলএলবি জানান, ব্যক্তি আক্রোশ থেকেই এই অভিযোগগুলো করা হচ্ছে। যদি এ ধরনের দলীয় পদবি ব্যবহার করে কেউ অন্যায় করে থাকেন, তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।