শিক্ষা ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির মোল্লা বহু দিন ধরেই আলোচিত-সমালোচিত এক নাম। আজ থেকে ১৬ বছর আগে তাকে নিয়ে পত্রিকায় শিরোনামে লেখা হয়েছিল- ‘তিতাসের এক কর্মচারী ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার মালিক।
তিতাসের বিক্রয় সহকারী হিসেবে বছর দশেক আগে যখন স্বেচ্ছায় অবসরে যান, কাদির মোল্লার বেতন তখন ছিলো সাকুল্যে চার হাজার টাকা। কিন্তু, সেই সময়েই তিনি ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ১৩টি ফ্ল্যাট, ২৯টি গাড়ি, একটি পাঁচতলা বাড়ি, একটি একতলা বাড়ি, একটি খামারবাড়ির মালিক। জমি ছিলো ৪৫ একর। গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ছিলো ১৮ কোটি ৫৩ লাখ।
নিজের অবৈধ আয়ের গল্প চাপা দিতে তিনি বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষাখাত। সারা দেশে অনেকগুলো স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা করেছিলের তিনি। অবৈধ টাকায় মালিক হয়েছেন ১৫১টি স্কুল, ৯৭ টি কলেজ ও ৮৫টি এতিমখানার। তার বাবার নামেও একটি ফাউন্ডেশন রয়েছে। ৩১৫টি স্কুলের এফডিআর করা হয়েছে মসজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশনে।
এছাড়াও স্ত্রীর নামে নাসিমা কাদির মোল্লা হাই স্কুল এন্ড হোমস, এনকে এম হাই স্কুল এন্ড হোমস, আব্দুল কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, পাঁচ কান্দি ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের উচ্চ মাধ্যমিকে অংশ নেয়া ১ হাজার ৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৪৭ জনই অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দেন। যা ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে সেরার রেকর্ড গড়ে।
কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ ২০১২ থেকে টানা তিন বছর ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। ২০১৫ থেকে সেরাদের তালিকা না হলেও ফলাফলে নিজেদের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে তারা। তবে টাকা দিয়ে জিপিএ-৫ কেনার অভিযোগ রয়েছে এই কলেজের বিরুদ্ধে। পরীক্ষার আগে পুরো কেন্দ্র কিনে নেয়। তারপর ওই কলেজের পরীক্ষার্থীরা ইচ্ছেমতো পরীক্ষা দিতে পারে। ভালো ফলের আশায় এইসব অপকর্মে সহায়তা করেন স্থানীয় কিছু অভিভাবকও। তারা মনে করেন যেভাবেই হোক জিপিএ ফাইভ চাই। আর এই যাদু জানেন কাদির মোল্লা ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা।
কাদির মোল্লার থামেক্স গ্রুপ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জনতা ব্যাংকের শীর্ষ একত্রিশ নাম্বারের ঋণগ্রহিতা ছিলো। সারাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে থামেক্স গ্রুপ ১ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দশ নম্বরে অবস্থান করছে। এই গ্রুপ জনতা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লোপাট করে চার হাজার কোটি টাকা দেশের শীর্ষস্থানীয় সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে ডাইভার্ট করেছে। তবে আব্দুল রাজস্ব বোর্ডের সর্বোচ্চ করদাতা কাদির মোল্লা কর বাহাদুর নামে পরিচিত।
অভিযোগ আছে, কাদির মোল্লা লোক দেখানো দান-খয়রাত করলেও তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর বেতন ছাড়াও অন্যান্য ফি ধরা হয় উঁচু হারে। সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের পড়ার কোনো সুযোগ নেই তার প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফির পাশাপাশি প্রতি শিক্ষার্থী থেকে ১০ হাজার টাকা করে জামানত নেওয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানে। নানা অজুহাতে এ জামানত আর ফেরত দেওয়া হয় না। ২০২৩ এর ১০ এপ্রিল একটি সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, শুধু এনকে এম স্কুলে প্রি প্রাইমারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছেন ৫ হাজারের মতো। এখান থেকেই জামানত জমা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। শুধু এই স্কুলে নয়, তার প্রতিষ্ঠিত আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজেরও একই অবস্থা। এই কলেজটিতে এখন শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ২ হাজার। এখানেও জামানত নেয়া হয়েছে ২ কোটি টাকার ওপরে।
অভিযোগের বিষয়ে কাদির মোল্লার মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।