কানাডায় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য আপনারা যে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সফলতার জন্য যোগ্য প্রস্তুতি এবং সঠিক দিক নির্দেশনার প্রয়োজন। তবে, এ পথের শুরুতেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের স্বপ্নকে নষ্ট করবেন না। বর্তমান যুগে অনেক প্রতারক প্রতিষ্ঠান এবং দালাল উচ্চ শিক্ষা এবং ইমিগ্রেশন সেবার নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভ্রান্ত করছে এবং অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে। এ জন্য সচেতন থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রথমেই একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা উচিত। বিভিন্ন র্যাঙ্কিং, গবেষণার সুযোগ, কোর্স কাঠামো এবং শিক্ষকতার মান বিবেচনা করে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রোগ্রাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করুন। বিশেষত, কানাডার সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হোন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ ও যাচাই করুন: একটি সফল আবেদন জমা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত করতে হবে। সাধারণত এসএসসি, এইচএসসি, এবং সর্বশেষ ডিগ্রির সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ (যেমন: IELTS, TOEFL), এবং আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়ার কাগজপত্র লাগে। এসব কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই করুন এবং ভুয়া বা অপ্রয়োজনীয় কোনো তথ্য ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন, মিথ্যা তথ্য দিলে তা আপনার শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আর্থিক পরিকল্পনা ও স্কলারশিপের সুবিধা: কানাডায় পড়াশোনার খরচ কিছুটা বেশি, তাই আর্থিক পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য আপনি স্কলারশিপ খুঁজে নিতে পারেন। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ সুবিধা থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত এজেন্ট ব্যবহার করুন: আপনার অ্যাডমিশন প্রক্রিয়াটি সহজ করতে একজন ভালো পরামর্শদাতা বা এডুকেশন এজেন্টের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তবে কোনো অস্বীকৃত বা অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান বা এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করবেন না। অনেক প্রতারক শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে প্রলুব্ধ করে থাকে, যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কানাডা সরকারের স্বীকৃত এজেন্ট ব্যবহার করুন এবং যেকোনো অর্থ দেয়ার আগে এজেন্টের প্রকৃত তথ্য যাচাই করুন।
প্রতারণা থেকে সুরক্ষার উপায়: অসংখ্য প্রতারক এজেন্সি উচ্চশিক্ষার নাম করে শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
সর্বদা চুক্তিপত্র দেখুন: কোনো এজেন্ট বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে ভর্তি এবং ভিসা প্রসেসিংয়ে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিলে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করুন।
ভুয়া প্রতিশ্রুতি এড়িয়ে চলুন: কোনো এজেন্ট যদি আপনাকে শতভাগ ভিসা গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে বুঝতে হবে সেখানে প্রতারণার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি যোগাযোগ করুন: কোনো এজেন্টের মাধ্যমে ভর্তি হতে গেলে, অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এজেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন।
বিকাশ বা নগদ অর্থ পরিশোধ করবেন না: ভিসা প্রসেসিং, ভর্তি বা টিউশন ফিস বাবদ অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে টাকা দিন।
বিদেশে পড়াশোনার উদ্দেশ মানসিক প্রস্তুতি: বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে পরিবার ও সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং একটি নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হবে। সেজন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখুন। পাশাপাশি, ভাষার দক্ষতা উন্নত করা এবং কানাডার সংস্কৃতি ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, শিক্ষার উদ্দেশে বিদেশ যাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আশাকরি, উপরোক্ত নির্দেশনা এবং পরামর্শগুলো আপনাদের কানাডায় উচ্চশিক্ষার পথে সহায়ক হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং প্রতারণার শিকার এড়িয়ে চলুন।
আন্তরিক শুভকামনা রইল আপনাদের সফল এবং সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
লেখক : সাবেক স্টেট অয়েল চেয়ার প্রফেসর, মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি, কানাডা