যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে( যবিপ্রবি ) শিক্ষার্থীকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়ার ঘটনায় পাল্টা মানববন্ধন করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আকিব ইবনে সাঈদ ও তার সহপাঠীরা।
বুধবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন আকিবের সহপাঠীর পাশাপাশি রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্যবৃন্দ। উক্ত মানববন্ধনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আকিবের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। একই সাথে ভুক্তভোগীর মিথ্যাচারের জন্য বিচার চান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আকিব বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভুলবশত সুমনকে একটা থাপ্পড় দিয়েছি। কারণ সে আমাদের দুই দিনের পরিশ্রমে গড়া আর্ট কাউকে না জানিয়ে নিয়ে গেছে। আমি এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে থাপ্পড় দিই এবং থাপ্পড়ের তীব্রতা খুব সামান্যই ছিল। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের কাছে ব্যক্তিগত খরচে নিয়ে যাই। তবে তার কানের পর্দা ফেটে যায় নি। বরং সে আঘাত পেয়েছে মাত্র। এরপর থেকে আমি সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি।
সুমনের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, আমি কখনো সুমনকে ফোনে কিংবা সামনাসামনি হুমকি - ভয়ভীতি প্রদর্শন করিনি। তার চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করতে চাইলেও সে তা অস্বীকার করে বলে জানান অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আকিব। এসময় 'আরণ্যক' প্রোগ্রামের মূল্যবান জিনিস না বলে নিয়ে যাওয়া, উপস্থিত মেয়েদের সঙ্গে উগ্র আচরণের জন্য সুমনের শাস্তি দাবি করেন তিনি। মানববন্ধনে জনসম্মুখে আকিব পুনরায় নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা মার্জনা করেন। মানববন্ধন শেষে আনিত মানহানি ও মিথ্যাচারমূলক অভিযোগের বিচার চেয়ে প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুমন কুমার মন্ডল বলেন, ঘটনার দিন দুজন আপু আমাকে হোটেলের সামনে আটকায়, এসময় আকিব ভাই আমার কোনো কথা না শুনেই 'কেনো ডিজাইন করা ককশিট নিয়ে যাচ্ছি ? ' বলেই আমার কানে বরাবর মুখে জোরে থাপ্পড় মারে। সাথে সাথে আমি অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তখন তারা আমাকে যশোর সদর হসপাতালে নিয়ে যায় ৷ হসপাতাল থেকে ঔষধ দিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে আমি ভালো ডাক্তার দেখায় এবং রিপোর্ট আসে আমার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। ডাক্তার বলেছে তিনমাস ঔষধ খেতে হবে, তারপর অপারেশন করা লাগতে পারে। কিন্তু ঔষধ কেনার টাকা নেই আমার, ধার করে ঔষধ কিনেছি। আমি যখন লিখিত অভিযোগ দিয়েছি তখন আকিব ভাই আমাকে বলেছে 'ভিসির সাথে আমার কথা হয়েছে'। এছাড়া বেশ কয়েকজন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে অভিযোগ দিলে পরবর্তীতে আমার ক্ষতি হবে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: হাফিজ উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ০৬ মার্চ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রোটার্যাক্ট ক্লাব ও ফটোগ্রাফিক সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে যবিপ্রবির দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি জায়গায় ফটো এক্সিবিশন ‘আরণ্যক - ARANNYAK’ অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ৭ মার্চ সন্ধ্যায় রঙ করা ককশিট কুড়িয়ে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকস্থ যুথি-বীথি হোটেলের সামনে ক্লাইমেট এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট (সিডিএম) বিভাগের সুমন কুমার মণ্ডল নামের এক ছাত্রকে সজোরে থাপ্পড় মারেন আকিব ইবনে সাঈদ।উক্ত 'চড়' কান্ডকে কেন্দ্র করে গত ০৯ মার্চ (শনিবার) প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুমন।