ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী আগামীকাল শনিবার ক্যাম্পাসে ফিরবেন। এ দিন তিনি নতুন আবাসিক হলে ওঠার জন্য আবেদন করার পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে চান বলে জানা গেছে।
এদিকে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গত রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা তদন্ত কমিটি। কিন্তু প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, নির্যাতনের সময় ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণও করা হয়। কাউকে জানালে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন আলাদা তিনটি কমিটি গঠন করে। একটি কমিটি করা হয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও। এর মধ্যে সব তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। হল প্রশাসনের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় সানজিদাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। অন্য প্রতিবেদনগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বর্তমানে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় নিজ বাড়িতে আছেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অভিযুক্ত পাঁচ আপুকে যেন ভার্সিটি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। আর আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা ফৌজদারি অপরাধ। তাই ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার চাই।’
ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টা ম্যাম আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। শনিবার (আগামীকাল) আমি ভার্সিটিতে যাব। সেখানে গিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে আমি মাইগ্রেশন করে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠব এবং সেখানেই থাকব।’
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট আমার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আশা করছি তারা আমার নিরাপত্তা দেবেন।’
গতকাল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোকসুদা আক্তার মাসু ও আটঘরিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। সেখানে তারা ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।’
ইউএনও মোকসুদা আক্তার বলেন, ‘আমি পাবনা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়েছি।
এদিকে নিয়োগবাণিজ্যর অডিও ফাঁস হওয়ার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। তিনি না থাকায় ছাত্রী নির্যাতনের তদন্ত প্রতিবেদনটি রেজিস্ট্রার দপ্তরে সিলগালা অবস্থায়ই আছে।
অনেকেই মনে করেছেন, ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম থাকায় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। হাইকোর্ট যে আদেশ দেবে, সেটা পালন করে তারা ঝামেলামুক্ত থাকতে চায়। এই ঘটনায় ছাত্রলীগকে বাঁচাতে ঘটনার শুরুতে কয়েক শিক্ষক চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঘটনা আলোচিত হওয়ায় তারা পিছিয়ে আসেন।
বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে উপ-উপাচার্য আছেন। তিনি চাইলেই উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য ছুটিতে থাকায় ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন খামবন্দি অবস্থায় আছে। তিনি না ফেরা পর্যন্ত প্রতিবেদনটি সিলগালা অবস্থায় থাকবে। তিনি এলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপ-উপাচার্য বলেন, ‘আগামীকাল শনিবার শৃঙ্খলা কমিটি মিটিং ডেকেছে। ওই কমিটির প্রধান হচ্ছেন উপাচার্য। তাই আমরা চাইলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সব কিছু পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’