কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলে বেপরোয়া আচরণ করছেন ছাত্রলীগ নেত্রী পরিচয় দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। যদিও হল ছাত্রলীগের কমিটিতে তাদের কোনো পদ নেই।
হলে সাউন্ডবক্সে উচ্চস্বরে ডিজে গান বাজানো, দলীয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়া, হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়া, রাতে নির্ধারিত সময়ের পর হলে প্রবেশ ও বের হওয়া, সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করা, সিনিয়রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে কথিত এসব ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে যাচ্ছেতাই আচরণ করছেন তারা।
গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে কথিত ছাত্রলীগ নেত্রী অর্পণা নাথ, জিনাত ইভাসহ বেশ কয়েকজন হলের টিভি রুমে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সিসিলি জামানের জন্মদিনের পার্টি করে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকায় তারা সেসময় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী উচ্চশব্দে গান বাজানোর কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। বিষয়টি পরে হল প্রাধ্যক্ষকে জানানো হলে কিছুক্ষণ পর গান বন্ধ করা হয়।
এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা থাকা সত্ত্বেও এসব পার্টিতে জুনিয়রদের যেতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। জোরপূর্বক তাদের পক্ষে এসব জুনিয়রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট ও কমেন্ট করানোর অভিযোগ রয়েছে। নিজেদের ইচ্ছামত হলে ছাত্রী উঠানো, হলের ডাইনিং মিল বন্ধ করা, ছাত্রী হলে রাত ৯টার পরে প্রবেশ এবং বাইরে যাওয়া নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে এসব ছাত্রলীগ নেত্রী তা মানেন না।
একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, অনেকেরই এখন পরীক্ষা চলছে, এসময় বাইরে যেয়ে খাওয়া সম্ভব না। হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে কথা বলায় মান ভালো না করে উল্টো ডাইনিংই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ডিজে পার্টি করার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ও প্রভোস্ট স্যার নির্দেশ দিলে তারা তা বন্ধ করে দেয়। তবে পরীক্ষার সময় উচ্চস্বরে গান বাজানো ঠিক হয়নি। আবার যদি এরকম করে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাতে নেত্রীদের বের হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে আমাদের কোনো সাংগঠনিক কাজে তাদের ডাকি না। যারা বাইরে যায় তারা ব্যক্তিগত কাজে যায়, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আর এসব বিষয় হল প্রশাসন দেখবে।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, উচ্চস্বরে গান বাজানো নিয়ে আগে কখনো এইরকম অভিযোগ আসেনি। অভিযোগের বিষয়ে আমরা দুইপক্ষের সাথে কথা বলব। ডাইনিং বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ডাইনিং বন্ধ করার বিষয়ে আমি কোনো নির্দেশ দেইনি।
রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা হল প্রশাসনের সাথে কথা বলব, যাতে হলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।