কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দীক মাসুমকে থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেমের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিভাগটির ১২১তম একাডেমিক সভায় কোর্স ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক জড়িয়ে পড়লে এই ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা গেছে। মো. আবু বক্কর সিদ্দীক মাসুম বিভাগটির সাবেক বিভাগীয় প্রধান ছিলেন আর মো. আলী মোর্শেদ কাজেম তার জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিভাগের ১২১তম অ্যাকাডেমিক সভায় কোর্স ডিস্টিভিউশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। তখন বলা হয় জুনিয়র ৪টি করে কোর্স নেবেন। কোর্স ডিস্টিবিউশনের শেষ দিকে দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটা কোর্স নিয়ে আবু বক্কর সিদ্দীক আর আলী মোর্শেদ কাজেম বাকবিতণ্ডা করে। এসময় হঠাৎ করে আলী মোর্শেদ কাজেম গালের মধ্যে থাপ্পড় মেরে বসেন। পরে আবু বক্কর সিদ্দীক প্রটেস্ট করন। এসময় আমরা বিভাগের শিক্ষকরা কাজেমকে রুম থেকে বের দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এ ঘটনায় মর্মাহত হয়ে এক শিক্ষক কান্না করে বের হয়ে যান।
বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল বলেন, ‘প্রতিবেদন করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করি না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যথাযথভাবে আমরা কোর্স ডিস্টিবিউশন করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে বাড়তি কোনো কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।’
থাপ্পড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমি এটা বলব না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা সমাধান করে ফেলেছি। এ ধরনের কোনো কিছু ঘটেছে বলে আমি বিবৃতি দিব না। বিভাগ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সমাধানও হয়ে গেছে। এরকম ঘটনা প্রত্যেকটা বিভাগে হয়ে থাকে। যেহেতু সমাধান করে ফেলেছি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী জানান, এই ঘটনা আমিও শুনেছি। যদি রিটেন কোন কমপ্লেইন আসলে কথা বলতে পারতাম। তবে বিষয়টি আমি যতটুকু শুনেছি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ। যাইহোক, কোনোভাবেই একসেপ্টেটেড বিহেভিয়ার হতে পারে না একজন সহকর্মীর সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না। যেহেতু এ বিষয়ে কিছু জানি না, তাই আমি মন্তব্য করতে পারব না।
এদিকে শিক্ষকদের কয়েকজন জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় দুজনে একাডেমিক মিটিং এ তর্কে জড়িয়ে ছিল। কিন্তু তখন গায়ে হাত তুলার মত বিষয় ঘটনা ঘটেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, এ বিষয়ে আমরা অফিসিয়ালি কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া ফেসবুকে লেখেন, অনাচার কোন পর্যায়ে পৌঁছালে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে একজন শিক্ষক তার সিনিয়র শিক্ষককে পিটিয়ে চশমা ভেঙে দেয়। এই শিক্ষক তার চাকরি পাওয়ার পর থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো শিক্ষককে পেটাননি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সবসময় হাসিমুখে কথা বলতে দেখেছি। তাহলে এমন কী বদলালো যে তার সহকর্মী পেটানোর মতো অধঃপতন হলো? পরিবর্তন আসলে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে। কিছু শিক্ষককে এমনভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে যে তারা আইনকানুন, নিয়মনীতি মানা কিংবা সহকর্মীকে সম্মান করার ধার ধারেন না।