কালোত্তীর্ণ এই বাংলা কবিতার কবি কুসুমকুমারী দাশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের মা।
কবি কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর বরিশাল শহরে এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাশ এবং মাতা ধনমাণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন
কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এরপর ছাত্রীদের অভাবে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তার বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন। প্রবেশিকা শ্রেণিতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তার বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। তারই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু নারীদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কাজ করেছেন। তিনি বরিশাল মহিলা সভার সম্পাদক ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিলো। ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন। তার অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে প্রবাসী ও মুকুল পত্রিকায়। তার কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কবিতা মুকুল তার কাব্যগ্রন্থ। পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন। তারা আদর্শ ছেলে কবিতাটি বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ লেখার শুরুতে উপস্থাপিত কাব্যাংশটি এই কবিতা থেকেই উদ্ধৃত।