সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে লাগামহীন কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বেসরকারি স্কুলের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে চাপ দিয়ে কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করছেন তারা। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরাও এসব লোভী শিক্ষকের শিকার। কেউ ক্লাসে যাক বা না যাক, প্রতি বিষয়ে প্রত্যেককে হাজার টাকা দিতে হয় প্রতি মাসে। এভাবে চার থেকে পাঁচ বিষয়ের কোচিংয়ে মাসে চার/পাঁচ হাজার টাকা জোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে অভিভাবকদের। যাদের একাধিক সন্তান স্কুলে যান তাদের অবস্থা আরো দিশেহারা।
ভুক্তভোগী কয়েক জন শিক্ষার্থী দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে দাবি করে স্ব-স্ব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করছেন কেউ। অন্যরা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছেন, শ্রেণি শিক্ষকের কাছেই কি সব নম্বর? তার কাছে পড়লেই কি তিনি একা সব বিষয়ে পাস করিয়ে দেবেন? ফলে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজন না থাকলেও কয়েক জায়গায় কোচিং করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের আরো অভিযোগ, কোচিংয়ে না গেলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে নানাভাবে হেয় করেন। মানসিক হয়রানি করেন। পরীক্ষায় নম্বর কম দেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক আলাদা ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন। এসব কোচিংয়ে তৃতীয় থেকে শুরু করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সরকারি মহিলা কলেজের সামনে একাধিক গলিতে রয়েছে অনেকগুলো বহুতল ভবন। প্রতিটি ভবনের বিভিন্ন কক্ষে রয়েছে বিদ্যালয় শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার। এ কারণে শহরজুড়ে এসব এলাকার নাম হয়েছে কোচিং জোন। প্রতিটি কোচিংয়েই অর্ধশতাধিক করে শিক্ষার্থী।
একটি কক্ষে দেখা গেলো, ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক প্রণতি সরকার ক্লাস নিচ্ছেন। ছাত্রীরা সবাই তারই স্কুলের। কোচিং বিষয়ে প্রণতি সরকারের দাবি, শুধু তিনি নন সরকারি স্কুলের অনেক শিক্ষকই কোচিং করান। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, কোচিং নিষিদ্ধ এমন কোনো বিধান আছে বলে তো জানি না। স্কুল থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
আর একটি ভবনে ক্লাস নিচ্ছিলেন সরকারি স্কুলেরই সুবিমল বড়াল সুজন। অনেকটা বেপরোয়া ভাব নিয়ে দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, কোচিং করাই তাতে কি হইছে?
সরকারি বিধানের তোয়াক্কা না করা এই অসৎ শিক্ষকের পক্ষ হয়ে পরে এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল দিয়ে মামলা করার হুমকি দেন।
একই স্কুলের আর এক শিক্ষক শামসুন্নাহার পারভীন সাংবাদিক দেখে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। একটু পরে কোচিং ছুটি দিয়ে দ্রুত বের হয়ে যান তিনি।
একই স্কুলের অপর্ণা দাশ, ফাইজুন্নেছা, আলম, তানিয়া আফরোজ, আব্দুল্লাহ আল মাসরুফকেও একই এলাকায় কোচিং করাতে দেখা যায়। এ ছাড়া শহরের আমতলা গলি রোড এলাকায়ও রয়েছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার।
আশিষ হালদার, মিজানুর রহমান, সাব্বির আহমেদ, সুফল বিশ্বাস প্রমুখ অভিভাবকের অভিযোগ, কোচিং বাণিজ্য এখন মহামারিতে পরিণত হয়েছে। যেহেতু একই শিক্ষক স্কুলে পড়ান, আবার কোচিংও করান, তাই কোচিংয়ে না গেলে স্কুলে নানাভাবে হেয় করা হয়, নম্বর কম দেয়া হয়। তাই তারা কোচিং এর বাড়তি খরচ টানতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আগে স্কুলের ভেতরে কোচিং করাতো। এখন সেটা বন্ধ করেছি। কিন্তু বাইরে কোচিং করালে সেটা কীভাবে বন্ধ করবো। জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক নিশ্চয়ই এটা দেখবেন।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুনিল চন্দ্র সেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নীতিমালার বাইরে যদি কেউ কোচিং বাণিজ্য করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষাবোর্ড শিক্ষক রেগুলেশনস ১৯৭৯ এর ধারা ৯ এ বলা আছে, ‘কোনো পূর্ণকালীন শিক্ষক স্কুলের স্বাভাবিক কাজের বাইরে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তিগত টিউশনি বা অন্য কোনো নিয়োগ লাভ বা অন্য কোথাও ভাতাসহ বা ভাতা ব্যতীত নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন না।’
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।