কোটাবিরোধী আন্দোলনে কৌশলী ছাত্রদল - দৈনিকশিক্ষা

কোটাবিরোধী আন্দোলনে কৌশলী ছাত্রদল

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে কৌশলে সম্পৃক্ত থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের নেতাদের মধ্যে অনিয়মিত কিংবা এরই মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেবেন না। পদধারী নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। সম্ভব হলে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন সংগঠিত করতেও ভূমিকা রাখবেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের নেতাদের কাছে এরই মধ্যে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। শিক্ষার্থীদের এই ন্যায়সংগত আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। ক্রিয়াশীল অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর মতো ছাত্রদলের নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরও তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়া নৈতিক দায়িত্ব।’ গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বহাল থাকল বলে জানান আইনজীবীরা। এর আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা চেয়েছিলেন, ৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ, সেটিকে ১০-এ নামিয়ে আনা হোক। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরালো হতে শুরু করে, যা এপ্রিলে এসে তীব্র হয়ে ওঠে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেই আন্দোলনে সাংগঠনিক পরিচয় বাদ রেখে ছাত্রদলসহ ক্রিয়াশীল অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতোই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। 

জানা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলনে মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পর চলতি সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও অধিক হারে ছাত্রদলের ‘নিয়মিত’ শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮-এর অধিকাংশ নেতা পরবর্তী সময়ে গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে ৬ জুন রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮-এর নেতারা।

লিখিত বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮-এর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় সরকার তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের মাধ্যমে ও কমিটির সদস্যের পর্যালোচনার ভিত্তিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে কেন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে গেছেন। এখন বিসিএসসহ সব প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছেন।’ অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের এ রায় আপিল বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষকে স্থগিত করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাইরে গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদসহ দু-একটি সংগঠন আলাদাভাবেও কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের (নুর) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন। এর বাইরে ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারেও সপ্তাহে দু-একটি কর্মসূচি পালিত হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034558773040771