কোটা আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অনড় অবস্থানে থাকলে সরকার বিকল্প ব্যবস্থার দিকে চলে যেতে পারে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আন্দোলন অব্যাহত থাকলে জনস্বার্থে সরকারের নমনীয় নীতি নাও থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এ সূত্রগুলো আরও বলেছে, কোটা সংস্কারে আওয়ামী লীগের বড় অংশের সমর্থন রয়েছে বলে এ আন্দোলন দমন করা নয়, থামাতে চায় সরকার।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে এমন প্রত্যাশা করছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। উচ্চ আদালতের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা রাখার আপিল বিভাগের আদেশ আন্দোলনকারী ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলে মনে করছেন মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য ও দলের কয়েকজন নেতা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, তারা যদি ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ গ্রহণ না করে তাহলে বিষয়টি আদালত অবমাননার দিকে মোড় নিতে পারে। আন্দোলন প্রসঙ্গে সরকারের ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের চার সপ্তাহের স্থিতিবস্থার আদেশের ফলে ইস্যুটি সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে এখন আলোচনার পথে হাঁটতে পারে উভয়পক্ষ।
এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেও। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটছে আদালতে, রাজপথে আন্দোলন করে, চেঁচামেচি করে, বকাবাদ্য করে বিষয়টি নিরসন হবে না। এটা করলে একটা পর্যায়ে হয়তো আদালত অবমাননাও হয়ে যেতে পারে।’
গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আমি যতদূর জেনেছি, যখন হাইকোর্ট বিভাগে এ মামলা চলে, তখন আজ যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন, তারা তাদের বক্তব্য আদালতে পেশ করার জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি, তাদের বক্তব্য সেখানে দেননি। মামলার রায় হয়ে গেছে। সেটা এখন আপিল বিভাগে। গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত তাদের কোনো আইনজীবী ছিল না, তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য।’
সরকারের বিভিন্ন মহল মনে করে, এখন সরকারের বা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা উচিত কোটা আন্দোলনকারীদের। এসব মহলের পরামর্শ হলো, স্থগিতাদেশের মধ্য দিয়ে এ জটিলতা দূর করার এক ধরনের রাস্তা প্রশস্ত হলো। আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে বিকল্প পথে যাওয়ার পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন সরকারদলীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, এ আন্দোলন নিয়ে দলের মধ্যেও কোনো বিরোধিতা নেই। কারণ, কোটা সংস্কারের যৌক্তিকতা রয়েছে। সে কারণে আপিল বিভাগের আদেশের পর আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছেড়ে আলোচনার টেবিলে আসতে পারে। কারণ, সরকারও ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু একদিনেই ইস্যুটি সুরাহা করার সুযোগ নেই। আদালত থেকে বেরিয়ে আসলে সরকারের হাতে সুযোগ আসবে। তখন আরও অনড় অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ তাদের হাতেও আসবে। সুতরাং চার সপ্তাহ আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করা উচিত।
সরকারের আরেক মন্ত্রী বলেন, আজকের পর কোটা আন্দোলন স্থগিত করে কোটাবিরোধীরা আলোচনার টেবিলে আসতে পারে। তা না করে আন্দোলন অব্যাহত রাখলে আদালত অবমাননার বিষয়টি সামনে এসে যাবে। কারণ, এরই মধ্যে জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। দিনের পর দিন এ ভোগান্তি চলতে দিতে পারে না সরকার। সরকার জনসাধারণের দুর্ভাগ দূর করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কাজে লাগাতে পারে। তিনি বলেন, আপাতত এগুলো ভাবতে চায় না সরকার। কোটা সংস্কারের যৌক্তিকতা রয়েছে বলে সরকারের শীর্ষ মহল মনে করে।
এ প্রসঙ্গে দলের আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আন্দোলন অনেক হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে চলে গেছে। আদালত থেকে বেরিয়ে এলে সরকার তার করণীয় পালন করবে। আন্দোলনকারীদের সরকারকে সে সুযোগ দেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, আজকের (আপিল বিভাগের আদেশ) পর আন্দোলনকারীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি থেকে সরে আসা উচিত। এ অচলাবস্থা দিনের পর দিন চলতে পারে না। আন্দোলনকারীরা অনড় অবস্থানে থাকলে নিরসনের ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেই সিদ্ধান্ত তারা নেবে।