সরকার পরিকল্পিতভাবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে চলমান লুটপাট, আর্থিকখাতের বিপর্যয়, আজীজ-বেনজীর-আসাদুজ্জামান-মতিউরদের দুর্নীতি, ভারতের সাথে রেলচুক্তিসহ সমসাময়িক নানা ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠক মো. রাশেদ খান।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে 'কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠকদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
রাশেদ বলেন, ‘২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি সফল ছাত্র আন্দোলন। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৮ এপ্রিলে থেকে জোরালো আন্দোলনে পরিণত হলে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আর কোনো কোটা থাকবে না, যেহেতু সংস্কার করলে আবার আন্দোলন হবে, তাই কোটা বাতিল করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সে সময়ে কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। সে সময় ২ জুলাই সরকার তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু গত ৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা বাতিল আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। তাহলে তিনি কেন বাতিল করার কথা বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা তো বাতিল চায়নি।’
ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করছে জানিয়ে রাশেদ বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি ইডেন কলেজের মেয়েরা আন্দোলনে রাস্তায় নামলে তাদের ওপর ছাত্রলীগের নারী ও পুরুষ কর্মীরা হামলা করছে।’
রোববার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে বেপরোয়া হবার নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতা বলেন, ‘এজন্য রোববার রাত থেকেই ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে গেছে। ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আপনারা যদি ছাত্রলীগের সামনে দাঁড়াতে না পারেন তাহলে আপনাদের ব্যর্থ করে দিতে পারে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আমরা যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম তাতে ছাত্রলীগ এক সময় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।’
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটা সংস্কার দাবি করেছিলাম দাবি করে রাশেদ বলেন, ‘সরকারের কমিটি বাতিল করেছিল। গত ৭ জুলাই কোটা বাতিলের যৌক্তিকতা নেই। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আমরা বাতিলের দাবি করিনি, সংস্কারের দাবি করেছিলাম। আমরা এখনো কোটা সংস্কার চাই।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে একজনও বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের এমন মন্তব্যের জবাবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা আন্দোলন করেছে তারাই যোগ্যতা ও মেধায় স্থান পেয়েছে।’
যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে যে হয়রানি করা হয়, সংগঠকদের নামে মামলা থাকায় বিসিএসে উত্তীর্ণ হবার কোনো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি।
কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হওয়া মামলার বিষয়ে রাশেদ বলেন, ‘এইরকম মামলা আমাদের ওপর হয়েছে, জেল খেটেছি। শিক্ষার্থীরা যদি সোচ্চার থাকে রাজপথে তাহলে তাদের গ্রেফতার করতে পারবে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সক্ষমতা অনুযায়ী পাশে থাকবো। আন্দোলনকারীদের যেন গ্রেফতার করতে না পারে সেজন্য যেভাবে পাশে থাকার দরকার আমরা সেভাবে পাশে থাকবো।’
এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতারা।