ক্যাডার ছেড়ে সাব-রেজিস্ট্রার : ছেলেটি গালমন্দ খাবারই যোগ্য? - দৈনিকশিক্ষা

ক্যাডার ছেড়ে সাব-রেজিস্ট্রার : ছেলেটি গালমন্দ খাবারই যোগ্য?

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার |

বিসিএস তথ্য ক্যাডারের  চাকরি  ছেড়ে সাব-রেজিস্ট্রার পদে যোগদান। এ বিষয়ে অনেক  লেখালেখি  হচ্ছে। সবাই ছেলেটাকে গালমন্দ করছেন। করাটা অযৌক্তিক নয়। ছেলেটি গালমন্দ খাবারই যোগ্য? 

১.  তবে এ বিষয়ে আমার একখান কথা আছে। 
এ জন্য কি ছেলেটি একাই দায়ী? এক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কি কোনো দায় নেই? অব্যাহতির দরখাস্ত  পাবার পর ডিজি, রেডিও কি ছেলেটির সঙ্গে কথা বলেছেন?  তাকে কাউন্সেলিং করেছেন ? ডিজি সাহেব  দরখাস্তটি ফরোয়ার্ড করার আগে সচিবের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা  করেছিলেন? সচিব কি ছেলেটিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, তাকে কাউন্সেলিং করেছিলেন?


এ ছেলেটিকে ডাকা, তার সঙ্গে কথা বলা, তাকে কাউন্সেলিং করা ডিজি এবং সচিবের দায় ছিলো। কারণ,  তারা তার কর্মের অভিভাবক, কর্মের পিতা।

২.  আরেকখান কথা
তথ্য মন্ত্রণালয়  কি ছেলেটিকে ছাড়তে বাধ্য করেছিলো? 
জামিনযোগ্য  অপরাধে জামিন পাওয়া আসামীর অধিকার।  এমন  ক্ষেত্রে জামিন দিতে হাকিম বাধ্য। তা সত্বেও  জামিন না দেয়ার অনেক নজির  রয়েছে । কারণ, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, বিচারকের  বাস্তবতা  বিবেচনা করে  সিদ্ধান্ত  দেয়ার সুযোগও আছে।  যেমন-বিচারক পরিস্থিতি  বুঝে যদি  যুক্তি  খুঁজে  পান যে, জামিনে গিয়ে  লোকটা  কাউকে  খুন করার চেষ্টা  করতে পারে, অথবা  নিজে খুন হবার আশঙ্কা  রয়েছে অথবা লোকটা  যদি  মারকা মারা অপরাধী হয়, তাহলে  বিচারক  তাকে জামিন পাবার অধিকার হতে বঞ্চিত  করা অস্বাভাবিক  নয়। তবে বিচারকের   সততা ও সদিচ্ছার  ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া বাধ্যতামূলক।
সরকারি  চাকরি  থেকে একবার  অব্যাহতি চাইলে, সেটা কারযকর করার  বাধ্যবাদকতা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে   বিষয়টি  বেস্বাভাবিক (অস্বাভাবিক )  ছিলো।  এতে রাষ্ট্রের  গতিপ্রকৃতি,  সরকার ও কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি  এবং  সামাজিক  দায়বদ্ধতার প্রশ্ন জড়িত ছিলো।  এসব বিবেচনায়  বিষয়টি আটকানো  অথবা অন্তত  ঝুলিয়ে  রাখা যেতো এবং  সেটা জনস্বার্থের অনুকূল হিসেবে  বিবেচিত হতো। কিন্তু  তাকে যেভাবে  অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেটাকে অনেকেই দুর্নীতি করার ছাড়পত্র  হিসেবে দেখছেন। 

৩. আরো একখান কথা
আমরা বড়  পদে  যেতে মরিয়া হয়ে  উঠি। বড় পদ পেয়েও যাই। কিন্তু বড় পদ পাবার দায় শোধ করি না। বড় পদের সব সুযোগ-সুবিধা  ভাগ করতে এবং  দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করে  দিন পার করে করতে  চাই। জনশ্রুতি  রয়েছে,  রেডিও বাংলাদেশের  জনবল ব্যবস্থাপনায় মহাগিট্টু  লেগে লেজেগোবরে  হয়ে আছে। সেখানে  পদোন্নতির  জটিলতা  এতোই তীব্র  যে, হতাশ হওয়া ছাড়া ন্যূনতম আশার আলো নেই।   জটিলতা দেখার ও দূর করার কেউ নেই। তাই এ ছেলেটির  চলে যাওয়াকে কেউ কেউ  নীরব  প্রতিবাদ হিসেবেও দেখছেন। এ বিষয়টিও সম্ভবত উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এ প্রসঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কয়েকটি  উদাহরণ দিই-
১. বাংলাদেশ  লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে  ১৩ বছর পদোন্নতি বন্ধ ছিলো। দলাদলি,  মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদির কারণে এমনটা  ঘটে। এক পোড়  খাওয়া রেক্টর গিয়ে আড়াই মাসে সব জট দুমড়েমুচড়ে ছুড়ে ফেলে  দেন এবং  রাতারাতি   ৫০ জন পদোন্নতি  পেয়ে যান।
২. প্রাথমিক  শিক্ষা  অধিদপ্তরেও ৫/৬ বছর পদোন্নতির জটিলতায়  স্থবিরতা  দেখা  দেয়। সেখানেও  মন্ত্রণালয়ে নবাগত এক সচিব  এক মাসের  মধ্যে  জট খুলে ফেলেন।
৩. বাংলাদেশ  পরমাণু  শক্তি  কমিশনে  ৪/৫ বছর নিয়োগ  বন্ধ ছিলো।  জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দেয় না। নানা প্রশ্ন করে। এক সচিবের ডিও পেয়ে চারদিনের মধ্যে  ছাড়পত্র  দিয়ে  দেয়।


শেষ  কথা
আমি আমার প্রায় লেখাতে সিএসপিদের প্রশংসা করি। কারণ,  আমি  তাদের  অনেককে কাছ থেকে  থেকে দেখেছি। এখন যারা বড়ো  কর্তা তাদেরই বা দোষ কী?  তারা দেখেছেন কাকাসুমাদের। কাকাসুমারা তো শুধু  মারকাট করে পদ-পদবি দখলে ব্যস্ত ছিলেন।  কেউ কেউ  বছর  না যেতেই একটার পর একটা বড় মন্ত্রণালয় বাগিয়েছেন। তাদের  ব্রত ছিলো,  কাজ নয়, পদই ধর্ম, পদই জীবন, পদ বাগাও, ভোগ কর,  কাজের খেতা কিলাও, কেবল পদের পেছনে  দৌড়াও। এ অবস্থায়  কাকাসুমারা ছাড়া অন্য কারোর দোষ  দেয়ার সুযোগই বা কই!

একটি প্রশ্ন
কোনো সিএসপি সচিবের কাছে কি এমন একটি ছাড়পত্র চাইতে সাহস পেতো অথবা কোনো সিএসপি  সচিবের  আমলে কি রেডিও বাংলাদেশের জনবল ব্যবস্থাপনায় এমন মহাগিট্টু ছিলো? 
যেকোনো ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। 

লেখক: সাবেক সচিব, লেখক, গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা

আবেদনের যোগ্যতা নেই তবু শিক্ষক - dainik shiksha আবেদনের যোগ্যতা নেই তবু শিক্ষক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে - dainik shiksha শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে হা*তুড়ি পেটা - dainik shiksha কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে হা*তুড়ি পেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএমজিএসে মাস্টার্স করার সুযোগ - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএমজিএসে মাস্টার্স করার সুযোগ সাত কলেজে চূড়ান্ত ধাপের বিষয় বরাদ্দ ৩ অক্টোবর - dainik shiksha সাত কলেজে চূড়ান্ত ধাপের বিষয় বরাদ্দ ৩ অক্টোবর প্রধান শিক্ষককে তাড়িয়ে চেয়ারে বসলো ছাত্র! - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে তাড়িয়ে চেয়ারে বসলো ছাত্র! সেন্ট যোসেফে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি আবেদন শুরু - dainik shiksha সেন্ট যোসেফে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি আবেদন শুরু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075938701629639