প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছে। শিক্ষা-সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার বাইরে ক্রীড়াঙ্গনেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল ঢাবি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেয়েছে নানা পদক; কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই গৌরব আজ হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এর পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাবিতে ১৯২৫ সালে গঠিত হয় শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা, টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, সাঁতার, জুডো, কারাতেসহ আরও কয়েকটি ডিসিপ্লিন রয়েছে। আন্তর্জাতিক, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিনে অনেকবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছে ঢাবি। জন্ম দিয়েছে নামিদামি ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, যারা মাঠের ভেতরে ও বাইরে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদের মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সহঅধিনায়ক শাহরিয়ার নাফীস, ক্রিকেটার বিকাশ রঞ্জন দাস, তারেক আজিজ খান, সজল চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন রুবেল; ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু, সাইদ হাসান কানন, শফিকুল ইসলাম মানিক, বাদল রায়, আরিফ খান জয়, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু, দিদারুল আলম; অ্যাথলেটিকসে মো. রকিব দোজা আকন্দ; হকিতে মো. মওদুদুর রহমান; ভলিবলে জেসমিন খান; হ্যান্ডবলে নুসরাত শারমীন, সায়মা মাহমুদা, ফারজানা আক্তার ভূঁইয়া; টেবিল টেনিসে ফারহানা পারভীন টুম্পা; ব্যাডমিন্টনে আফসানা ফেরদৌস; সাঁতারে নিবেদিতা দাস অন্যতম। এ ছাড়া আইসিসির ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খানও এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন।
এক সময় ঢাবির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে জাতীয় দলে সুযোগ পেত; কিন্তু সেসবই আজ অতীত। আগের অর্জিত স্মৃতিস্মারকে পড়েছে ধুলোর আস্তরণ। আন্তর্জাতিক, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে গত ১০০ বছরে ফুটবলে ৩৩ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাবি। রানার্সআপ হয়েছে ১৩ বার। ইন্টার কজেজিয়েট অ্যাসোসিয়েশন ডাক্কা ১৯৪৮-এ ঢাবি প্রথম চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে; কিন্তু ২০১৬ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ছয় বছর ঢাবির কোনো অর্জন ছিল না। অবশ্য ২০২২ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফের চ্যাম্পিয়ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১৬ সালে সর্বশেষ এখান থেকে দিদারুল আলম জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়; কিন্তু গত ছয় বছরে কোনো শিক্ষার্থী আর সে সুযোগ পায়নি।
ক্রিকেটে ১৯৬৩ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাবি। ২০১৯ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট (ছাত্র) প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, গত তিন বছরে কোনো ট্রফি মেলেনি। এ ছাড়া ২০০৫ সালে শাহরিয়ার নাফীস আহমেদ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেললেও দীর্ঘ দেড় যুগে আর কেউ সে সুযোগ পায়নি।
এ ছাড়া অ্যাথলেটিকসে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি রানার্সআপ হয়েছে চারবার। স্বর্ণপদক পেয়েছে ২৭টি। পাশাপাশি রৌপ্য ৩৫টি, ব্রোঞ্চ ৫৫টি আর তাম্র পদক পেয়েছে ৯টি। ভলিবলে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৬৬ সালে। এ খেলায় ছাত্রছাত্রী মিলে ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন, ১২ বার রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে ১১ বার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পস (ছাত্র) ভলিবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাবি।
হ্যান্ডবলে ছাত্রছাত্রী মিলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৬ বার, ৮ বার রানার্সআপ ও ৬ বার হয় তৃতীয় স্থান। ১৯৯৪ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ওই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। বাস্কেটবলে ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন, ১০ বার রানার্সআপ, ৫ বার পায় তৃতীয় স্থান। সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে ইন্টার ইউনিভার্সিটি বাস্কেটবল কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। হকিতে ১৯ বার চ্যাম্পিয়ন, ৭ বার রানার্সআপ আর ৪ বার পায় তৃতীয় স্থান। ১৯৬৬ সালে ইস্ট পাকিস্তান ইন্টার ইউনিভার্সটি হকি কম্পিটিশন হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হকি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাবি।
সাঁতার ও ওয়াটারপোলোতে ১২ বার চ্যাম্পিয়ন, ৮ বার রানার্সআপ ও ৬ বার তৃতীয় হয়। দাবা ও ক্যারমে ৩ বার চ্যাম্পিয়ন, ৬ বার রানার্সআপ, ৫ বার তৃতীয় হয়। ব্যাডমিন্টনে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ২৭ বার চ্যাম্পিয়ন, ২১ বার রানার্সআপ, ২ বার তৃতীয় হয়। টেবিল টেনিসে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ৩৮ বার চ্যাম্পিয়ন, ২২ বার রানার্সআপ, ৬ বার তৃতীয় হয়। জুডোতে ১ বার চ্যাম্পিয়ন, ১টি স্বর্ণপদক, ৫টি রৌপ্য, ৭টি ব্রোঞ্জ, ২টি তাম্র পায়। কারাতে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ২টি স্বর্ণপদক, ১১টি রৌপ্য, ব্রোঞ্জ ১২টি ও ৭টি তাম্র পদক পেয়েছে ঢাবি। এ ছাড়া, ইয়োগা, কুস্তি, বডিবিল্ডিং, জিমন্যাস্টিক, ভারোত্তোলন, শুটিং, বক্সিং, অলিম্পিক, টেনিস ও লং টেনিসেও বিশেষ অবদান রয়েছে।
অবশ্য ধীরে ধীরে খেলাবিমুখ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য আর আগের মতো পর্যাপ্ত সুযোগ ঢাবিতে নেই। প্রতিবছর আন্তঃবিভাগ খেলার জন্য যে পরিমাণ বাজেট থাকা দরকার, তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় টিমে খেলার জন্য আগে বিভাগে ভালো দক্ষতা দেখাতে হয়। এ ছাড়া খেলাধুলার আরেক প্রতিবন্ধকতা সেমিস্টার সিস্টেম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। সে জন্য শিক্ষার্থীদের সকাল ৮টা থেকে ক্লাস করতে হয়। ঘন ঘন ক্লাস পরীক্ষা, মিডটার্ম, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পায় না। মাঠের সংকট তো আছেই।
শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, ভালো খেলোয়াড়েদের বিশেষ উপায়ে দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ দিলেও ঢাবিতে কিছুটা ব্যতিক্রম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় ৪৮ নম্বর পেতে হয়। তবে, বিকেএসপি থেকে ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী ভালো খেলোয়াড় হয়েও এ নম্বর না পাওয়ায় ভর্তি হতে পারেন না। খেলাধুলার মানোন্নয়নে খেলোয়াড়- শিক্ষার্থীদের জন্য নম্বরের শর্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।
ঢাবির শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমাদের খেলার মাঠসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে; কিন্তু ভালো খেলোয়াড় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো খেলোয়াড় ভর্তি হলে তাদের জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে; কিন্তু ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে চাইলে ভর্তি পরীক্ষার নম্বরে ছাড় দিতে হবে।’
ঢাবির শিক্ষার্থীরা চান খেলাধুলার প্রতি প্রশাসন সুনজর দিক। শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ঢাবি থেকে অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে; কিন্তু এখন সেটি স্বপ্নের মতো। খেলাধুলা না করতে পারায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। আমি মনে করি এ বিষয়ে প্রশাসনের সুনজর প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘খেলাধুলায় আমাদের অনেক অর্জন। আমরা আরও ভালো কিছুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
17
নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের কোনো আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে রাখা ছিল, যেটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সারাসরি তাদের টাকা দেয়া হয়। যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
আজ শনিবার উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং বেশ কিছু স্থানে ইভিএম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইভিএম করার পরে আর কোনো ভোট জালিয়াতি করার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ পাস করেছি। আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকতো তাহলে আমরা এই আইন কেন করলাম? খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতে পারতাম। তাতো আমরা করি নাই। কারণ আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।’