ঢাকার কেরানীগঞ্জে ক্লাস বন্ধ রেখে একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জোর করে মানববন্ধনে দাঁড় করানোর অভিযোগ উঠেছে। নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের সড়ক নয়াবাজার এলাকায় ‘বিদ্যালয়ের জমিসংক্রান্ত বিষয়ে অপপ্রচার ও বিদ্যালয় কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদে’ ব্যানারে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এ গফুর ও সদস্যদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ মানববন্ধন করানো হয়।
এর আগে গত শুক্রবার নয়াবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ গফুর, পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সালাউদ্দিন ও মো. কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির চেষ্টার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। বামনশুর, নুরন্ডি, নয়াবাজার, আটি পাঁচদোনা, নবাবচর এলাকার কয়েক শ বাসিন্দা বিদ্যালয়ের জমি রক্ষাসংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি এম এ গফুর, সদস্য মো. সালাউদ্দিন, মো. কামাল উদ্দিনসহ তাঁর সহযোগীরা নিজেদের অন্যায় ও অনিয়ম আড়াল করতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী জানায়, আজকের মানববন্ধনের বিষয়ে তারা কেউ কিছু জানত না। প্রথম ক্লাস শেষে হঠাৎ কয়েকজন শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের কমিটির লোকজন শ্রেণিকক্ষে এসে মানববন্ধনে অংশ নিতে যেতে বলেন। পরে ক্লাস রেখে সবাই মানববন্ধনে যায়। মানববন্ধন শেষে আর ক্লাস হয়নি। ছুটি দিয়ে দেয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নবম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলে, ‘শুনেছি আমাদের বিদ্যালয়ে জমিসংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যা হয়েছে। সকালে স্যারেরা ক্লাসে এসে বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবাদ করা দরকার। তাই সবাইকে মানববন্ধনে অংশ নিতে হবে। স্যারদের নির্দেশে আমরা মানববন্ধনে এসেছি।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এ গফুর নিজের অপকর্ম ঢাকতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ রেখে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক মানববন্ধন করিয়েছেন। গত শুক্রবার পাঁচ গ্রামের কয়েক শ বাসিন্দা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি-অনিয়ম ও জমি বিক্রির চেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এতে এলাকার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশ নেন। তাঁদের এখন বিদ্যালয়ের জমির আত্মসাৎকারী বানিয়ে মানববন্ধন করিয়েছেন কমিটির লোকজন।
ফারুক হোসেন নামের একজন বলেন, ‘২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ের ২১০ শতাংশ জমিতে ড্রেজার (খননযন্ত্র) দিয়ে বালু ভরাট করে এম এ গফুর, সালাউদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা জমি বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন। তখন এলাকাবাসী তাঁদের বাধা দেন। তাঁরা এতে সফল না হলে রোজিনা আক্তার নামের ২৩ শতাংশ জমির ভুয়া জাল দলিল বানিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ের জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছেন। তাঁরা এখন উল্টো মানববন্ধন করেছেন।