মাইক্রো-ফিন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ক্ষুদ্রঋণের বিপরীতে ২৪ শতাংশ হারে সুদ নেয়। কিন্তু, ঋণ গ্রহণের পরের সপ্তাহ থেকেই কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বলে প্রকৃত সুদের হার অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই ক্ষুদ্রঋণে সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে এমআফআইগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির (এমআরএ) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এমআরএ আয়োজিত কর্মশালা উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তাগিদ দেন।
কর্মশালায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে তাদের ব্যাংক ঋণ সহজ করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ঋণের সুদকে সুদ না বলে সার্ভিস চার্জ বলার আহ্বান জানায়।
এমআরএর বার্ষিক প্রতিবেদন ‘মাইক্রো ফিন্যান্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকাশের আগে প্রতিবেদন নিয়ে অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে কর্মশালা উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ্। অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র ঋণের তহবিল বিতরণকারী সংস্থা পিকেএসএফ ছাড়াও ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, টিএমএসএসসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কর্মশালার শুরুতে আব্দুর রউফ তালুকদার এমআরএর লাইব্রেরি অটোমেশন, ই ক্লিপিং, ই আর্কাইভিং ও এমআরএ ইনফো শীর্ষক চারটি ই-সেবা উদ্বোধন করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ক্ষুদ্রঋণ সাধারণত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে থাকেন। অপরদিকে ব্যাংক লোন নেন শিল্পমালিকরা। কিন্তু ব্যাংক লোনের সুদের হারের চেয়ে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার বেশি। এটিকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার উপায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ্ প্রশ্ন তোলেন, কেউ ২৪ শতাংশ সুদে ১০০ টাকা ঋণ নিলে এক বছর ওই টাকা ব্যবহারের পর ১২৪ টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু আপনি যদি ১০০ টাকা ১৫ দিন বা ১ মাস ইউজ করেন তাহলে কি সেটার ইন্টারেস্ট রেট ২৪ শতাংশ হওয়া উচিত?
সভাপতির বক্তব্যে এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ এমআরএর প্রতিবেদন নিয়ে মতামত দেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের ইমেইল করেও অংশীজনরা মতামত দিতে পারবেন। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দিতে হবে। এরপর আমরা প্রতিবেদন প্রিন্টে পাঠিয়ে দেবো। এর আগে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ক্ষুদ্রঋণের সুদকে সার্ভিস চার্জ বলার আহ্বান জানান।
এমআরএ জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। সে হিসেবে দেশের প্রায় ১২ কোটি গ্রাহক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষুদ্রঋণের সুফল ভোগ করেন।