দৈনিক শিক্ষাডটকম, খুলনা: খুলনা-মোংলা রেলপথ চালুর মাধ্যমে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এ পুরো অঞ্চলে। উদ্বোধনের সাত মাস পর শনিবার (১ জুন) সকাল ১০টায় খুলনা-মোংলা রেলপথ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
মোংলা কমিউটার নামে ট্রেনটি বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে ৫৪৯ যাত্রী নিয়ে নিজ গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
এর আগে সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে ছেড়ে ৯টা ২৫ মিনিটে বেনাপোল জংশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টায় মোংলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ট্রেনটি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এ পথে ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নও পূরণ হলো।
দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মোংলা কমিউটার ট্রেনটি খুলনার মোহাম্মদ নগর স্টেশনে পৌঁছে। পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে দুপুর একটার দিকে যাত্রী নিয়ে মোংলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
খুলনার মোহাম্মদ নগর রেল স্টেশনের টিকিট বুকিংয়ের দায়িত্বে থাকা মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। আজকে নতুন রেল পথে ট্রেন চালু হচ্ছে। স্টেশনে জনতা ও যাত্রীদের অনেক ভিড়। যাত্রীদের জন্য মোংলা থেকে বেনাপোল যাওয়ার ও বেনাপোল থেকে মোংলা গমনাগমনে সুবিধা হলো।
এ রুটে ট্রেনটি মোট আটটি স্টেশনে দাঁড়াবে। খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, এরপর ফুলতলা থেকে মোংলা নতুন রেলপথে এ ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার।
খুলনা-মোংলা নতুন এই রুটে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করবে ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন, আড়ংঘাটা রেলওয়ে স্টেশন, মোহম্মদনগর রেলওয়ে স্টেশন, কাটাখালী রেলওয়ে স্টেশন, চুলকাটি রেলওয়ে স্টেশন, ভাগা রেলওয়ে স্টেশন, দিগরাজ রেলওয়ে স্টেশন ও মোংলা রেলওয়ে স্টেশনে।
তা ছাড়া বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে মোংলায় যাবে।
সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি মোংলায় পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। এরপর মোংলা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে ৪টায়। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন এ রুটে একই সময়ে ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা ৭১৬টি।
উল্লেখ্য, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে একনেকে অনুমোদনের পর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে। নানা জটিলতায় পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
৯১ কিলোমিটার নতুন এ রেলপথে রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের নির্মাণ সম্পন্ন। এরই মধ্যে চার দফায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলেছে এ রুটে।