গাজীপুরের টঙ্গী থানার পাগাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন তিনতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। তাঁরা বলছেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ভবনটি নির্মাণ হলে জায়গাটি সংকুচিত হয়ে যাবে; যার ফলে ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহৃত মাঠটি আর রক্ষা করা যাবে না।
বিকল্প স্থানে ভবন নির্মাণের দাবিতে ‘খেলার মাঠ রক্ষা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গতকাল রোববার বিকেলে স্থানীয় লোকজন নিয়ে সভা শেষে মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ যেকোনো মূল্যে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ বিষয়ে কাল মঙ্গলবার ওই এলাকায় সমাবেশ ও মানববন্ধন ডাকা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে কয়েক দফায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানকার মাঠটি এই বিদ্যালয়, পাশের টঙ্গী আশরাফুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসাসহ ওই এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার একমাত্র উন্মুক্ত স্থান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৯৪ ও ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে একটি দোতলা ও একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত। এমন অবস্থায় ৯টি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে তিনতলা একটি ভবন নির্মাণের কথা চলছে। কর্তৃপক্ষ চায়, পূর্ব পাশের পরিত্যক্ত একতলা ভবনটি ভেঙে আরও জায়গা নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করতে। কিন্তু এলাকাবাসী বলছেন, তাহলে মাঠ সংকুচিত হয়ে যাবে। এর পরিবর্তে উত্তর পাশের পুরোনো দ্বিতল ভবনটি অপসারণ করে সেখানে নতুন ভবন করতে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
আশরাফুল উলুম ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সহকারী সুপার তাজুল ইসলাম ফারুকী বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় মাঠটি অনেক ছোট ও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই অবস্থায় উত্তর অংশে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে মাঠটি সংকুচিত হবে না।
টঙ্গীর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শওকত আলী বলেন, একজন শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার জন্য শুধু কিছু ভবনই প্রয়োজন হয়, তা না; খেলার মাঠ-গাছগাছালিও প্রয়োজন। তা না হলে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে বঞ্চিত হলে মাদকাসক্তি ও কিশোর গ্যাং তৈরির প্রবণতা আরও বাড়বে।
এ নিয়ে কথা হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসমিন আরা মমতাজ বলেন, ‘২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে চার ফুট দেবে যাওয়ায় একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় ১০ বছর পর নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাঠের সৌন্দর্য আমি কেন নষ্ট করতে চাইব। কিন্তু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্ভব না। দোতলা ভবনটি ভেঙে ফেলা হলে শ্রেণিকক্ষই তো থাকছে না। তাই ওই স্থানে ভবন নির্মাণ না করার বিকল্প নেই।’
যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদ পারভীন বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণ ও মাঠের বিষয়ে আমাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। ভবন নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কয়েক বছর আগেই নেওয়া হয়। তখন কেউ মাঠ নিয়ে আপত্তি জানাননি। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’