চলতি বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন শায়েখ ড. মাহের আল মুয়াইকিলি। আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন তিনি। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সম্প্রতি এক রাজকীয় ফরমানে আরাফাতের দিন খুতবা দেওয়ার তাকে অনুমোদন দেন। মসজিদুল হারামের পেজ ইনসাইড দ্য হারামাইন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় ৯ জিলহজ। এদিন মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের মূল খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়। সৌদি আরবের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হবে। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলা, ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, উর্দু, ফারসি, রুশ, চীনা, তুর্কি, স্প্যানিশ, হিন্দি, তামিল, সোয়াহিলিসহ ১৪টি ভাষায় খুতবা অনুবাদ করা হবে।
এবার খুতবা বাংলায় অনুবাদ করার দায়িত্বে থাকবেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। পুরো কাজটির তত্ত্বাবধানে থাকবে মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ।
মুঠোফোন বা কম্পিউটারে মানারাতুল হারামাইন (https://manaratalharamain.gov.sa) ওয়েবসাইটে ঢুকে নির্দিষ্ট ভাষা নির্বাচন করলে সেই ভাষায় খুতবার অনুবাদ শোনা যাবে।
গণিতের শিক্ষক থেকে ইমাম
পবিত্র কোরআনের অসাধারণ তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পবিত্র কাবার ইমাম শায়খ মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি পবিত্র মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। হিফজ শেষ করার পর মদিনার টিচার্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে গণিতের শিক্ষক হিসেবে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৪২৫ হিজরিতে পবিত্র মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ্ অনুষদ থেকে মাহের বিন হামাদ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪৩২ হিজরিতে ইমাম সিরাজি রহ. রচিত শাফেয়ী মাজহাবের কিতাব ‘তুহফাতুন নাবিহ শারহুত তানবিহ’র ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
মাহের বিন হামাদের কর্মজীবন শুরু হয় উম্মুল কুরার জুডিশিয়াল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। ১৪২৬-২৭ হিজরির পবিত্র রমজানে মসজিদে নববির সহকারী ইমামের দায়িত্ব পান তিনি। ১৪২৮ হিজরির রমজানে মসজিদুল হারামের তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের ইমাম মনোনীত হন। এরপর ওই বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদুল হারামের স্থায়ী ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মাহের বিন হামাদের মা–বাবার বিবাহ নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে। বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি একজন পাকিস্তানি মেয়েকে বিয়ে করবেন। কিন্তু পরিবার তা মানছিল না। পরে মাহেরের দাদা ভাবলেন, ছেলেকে বাড়িছাড়া করলে হয়তো মাথা থেকে ওই চিন্তা নেমে যাবে। তবে মাহেরের বাবা হামাদ আল মুয়াইকিলি বাড়ি ছাড়লেন ঠিকই, কিন্তু ওই মেয়ের কথা ভোলেননি। সোজা চলে যান জেদ্দায়। সেখানে ওই মেয়েকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির ঘরে বেশ কয়েকজন সন্তানের জন্ম হয়। তাঁরা সবাই কোরআনের হাফেজ। তাঁদেরই একজন মাহের আল মুয়াইকিলি। মসজিদুল হারামের ইমাম ড. মাহের আল মুয়াইকিলির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁরাও সবাই হাফেজে কোরআন।
সম্প্রতি হারামাইন পরিষদ গত এক শ বছর ধরে হজের খুতবা দেওয়া ইমামদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা গেছে, ১৪ জন ইমাম এই সময়ে খুতবা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪০২ হিজরি (১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে টানা ১৪৩৬ হিজরি (২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৩৫ বছর খুতবা দিয়েছেন গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শায়খ। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেন। এর পর থেকে প্রতিবছর একজন করে নতুন খতিব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আল শায়খ। তিনি ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি পর্যন্ত ৩৩ বছর (এক বছর বাদে) খুতবা দিয়েছেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আল শায়খ। তিনি ১৩৭৭ হিজরি থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত ২৩ বছর খুতবা দেন।