গবেষণায় জালিয়াতি রোধে ঢাবির নীতিমালায় দ্বিমত হাইকোর্ট কমিটির - দৈনিকশিক্ষা

গবেষণায় জালিয়াতি রোধে ঢাবির নীতিমালায় দ্বিমত হাইকোর্ট কমিটির

ঢাবি প্রতিনিধি |

উচ্চ শিক্ষাসহ পিএইচডি গবেষণায় জালিয়াতি (প্লেজিয়ারিজম) রোধে প্রণীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার সঙ্গে একমত নয় হাইকোর্টের কমিটি। প্রস্তাবিত নীতিমালায় ‘গবেষণায় চুরি’র দায়ে গবেষকের সঙ্গে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ককে শাস্তির আওতায় আনার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আরও তিন ধাপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এতে। কিন্তু হাইকোর্টের কমিটি গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক বা সংশ্লিষ্ট অধ্যাপককে শাস্তি দেওয়ার বিরোধী। তারা কেবল গবেষককেই শাস্তির আওতায় আনতে চান।

  

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি রোধে গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার ইউজিসির ডাকে এক ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হন। ওই কমিটির সদস্যদের একজন হলেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি রোববার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নীতিমালার শিরোনামই ভুল। শিরোনামে অর্ডিন্যান্স শব্দ আছে। কিন্তু অর্ডিন্যান্স করতে পারেন একমাত্র রাষ্ট্রপতি। এছাড়া এতে গবেষণায় চুরির দায়ে তত্ত্বাবধায়ককেও শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব আছে। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন এক চিঠিতে এ অভিযোগ আনেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের হয়। মামলার শুনানিতে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ উল্লিখিত কমিটি গঠন করে দেন। পাশাপাশি এ কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতি রোধে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে জমা দিতে বলা হয়।

ওই কমিটির সদস্যরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মো. তারেক, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাজনীন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর। ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেন।

জানতে চাইলে ড. জামান বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নীতিমালা করে হাইকোর্টে জমা দিয়েছিল। ওই নীতিমালা কমিটির সদস্যরা দেখেছেন। বৈঠকে একজন সদস্য জানিয়েছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীকালে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছে। তাই সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সর্বশেষ প্রণীত নীতিমালাটি তারা হাইকোর্টের মাধ্যমে চাইবেন। ওই নীতিমালাটি পাওয়ার পরে কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। নামপ্রকাশ না করে ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের নির্ধারিত ৩ মাস সময় শেষ হবে। এর আগেই কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করা হবে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু শিক্ষকের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ফাঁস হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের ইস্যু দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। অন্যদিকে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের উল্লিখিত ঘটনায় রিট মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণায় নকল নিয়ে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও নির্দেশ দেন। এছাড়া শুনানি নিয়ে একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, তা খতিয়ে দেখে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে ইউজিসিকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।

এরপর নড়েচড়ে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এতদিন তাদের কাছে কেবল ইংরেজিতে লেখা থিসিসের চুরি ধরার সফটওয়্যার ছিল। প্রতিষ্ঠানটি গত আগস্টে বাংলায় লেখা গবেষণাপত্র, অ্যাসাইনমেন্ট, টার্ম পেপারসহ বিভিন্ন প্রবন্ধে ‘সিমিলারিটি চেকিং’ (চৌর্যবৃত্তি) নিরূপণের জন্য ডিইউবিডি ২১ (ফঁনফ ২১) নামে একটি সফটওয়্যার অবমুক্ত করে।

এছাড়া হাইকোর্টে দাখিলকৃত খসড়া নীতিমালাটি সম্প্রতি চূড়ান্ত করা হয়। তবে সেটি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে কি না সেটি কোনো মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওই নীতিমালা চূড়ান্ত করার কাজের নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি রোববার বলেন, বেশকিছু দিন আগেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেটি একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ‘স্ট্যাটিউটস’ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, নীতিমালায় মূলত দুটি দিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, গবেষণা চুরি প্রতিরোধ ও মৌলিক গবেষণা নিশ্চিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কোনো গবেষণায় যদি রেফারেন্সসহ (স্বীকৃতি) ২০ শতাংশ লেখা অন্যের কাছ থেকে নেওয়া হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ২১ থেকে ৪০ শতাংশ লেখা যদি অন্যের থাকে, তাহলে তা ফেরত পাঠানো হবে, যাতে তা গবেষক ঠিক করে আবার জমা দিতে পারেন। যদি ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ নকল ধরা পড়লে সেটিও ঠিক করার সুযোগ দেওয়া হবে। ৬০ শতাংশের বেশি নকল থাকলে সংশ্লিষ্ট গবেষক এবং তার সুপারভাইজারকে (তত্ত্বাবধায়ক) শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শাস্তি হিসেবে জরিমানা এবং সর্বোচ্চ চাকরিচ্যুতির বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069079399108887