গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অব্যাহত রক্তাক্ত ইসরায়েলি আগ্রাসন মোকাবিলায় ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন’ (ওআইসি)-এর নির্বাহী কমিটির মন্ত্রী পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে জরুরিভিত্তিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করতেও আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।
গতকাল বুধবার জেদ্দায় ওআইসির সদর দপ্তরে ওই বৈঠকে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সৌদি আরবের উদ্যোগে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। ইসরায়েলের হামলায় ৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের বর্বরোচিত বোমা হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে গাজায় ইসরায়েলের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের সমস্ত মৌলিক নীতির লঙ্ঘন করেছে। তাই আমরা সকল পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গাজায় জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের মানবিক প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে নির্বিচারে হামলার কারণে মানবিক পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ইসরায়েলের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করি, যা সমগ্র অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।’
গত ১৬ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে রাশিয়ার প্রস্তাবিত রেজুলেশন পাস না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি অবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জোরালো আবেদন জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করার আহ্বান জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কেবলমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও জাতিসংঘের রেজুলেশন, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপ দ্বারা ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার অর্জনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।’
ফিলিস্তিনি জনগণের এই সংকটময় সময়ে সকল ওআইসি সদস্যা রাষ্ট্রসমূহকে ভেদাভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য শেষ করেন।
ওআইসির এই জরুরি বৈঠকে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগদান করে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে তাদের সংহতি প্রকাশ করেন এবং ইসরালের অব্যাহত আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান। বৈঠকের শুরুতেই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান ও ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তার আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলমান সংঘাতের সর্বশেষ পরিস্থিতি সবাইকে জানান। সভা শেষে একটি যৌথ ঘোঘণাপত্র সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ছাড়াও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মাদ জাবেদ পাটোয়ারি ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন।