গান কবিতা শিল্পপ্রেমি খলিফা হারুন - দৈনিকশিক্ষা

গান কবিতা শিল্পপ্রেমি খলিফা হারুন

বিবিসি |

খলিফা হারুন আল-রশিদ এর সময়কাল ছিল খিলাফত শাসনামলের স্বর্ণযুগ। তার সাম্রাজ্য মধ্য এশিয়া থেকে লিবিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। 
তবে তার শাসনকাল ছিল মাত্র ২০ বছরের কিছু বেশি। ৭৮৬ থেকে ৮০৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। অনেক মানুষই বিশ্বাস করেন যে, শিল্প, বিজ্ঞান এবং সাহিত্যের অনেক সেরা কাজ হারুন আল-রশিদের শাসনামলেই এসেছে। তাদের মতে, হারুন আল-রশিদ এবং বাগদাদ- এই নাম দুটো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

বাগদাদ ছিলো একটি শক্তিশালী রাজ্য, ঠিক যেমনটা আলিফ লায়লায় বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে, তার শাসনামলের শেষ দশ বছরে তার প্রিয় শহর ছিল সিরিয়ার শহর রাক্কা। এটি বাগদাদ থেকে উত্তর দিকে এবং খিলাফত সাম্রাজ্য ও বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তের কাছে অবস্থিত ছিলো।

তিনি বুদ্ধিজীবী এবং কবিদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন রোম্যান্টিক নায়ক, একজন কোমল হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি এবং সৌন্দর্য প্রেমী। বিশেষ করে তার সুন্দরী উপপত্নীদের তিনি পছন্দ করতেন যারা ছিলেন বুদ্ধিমতী এবং উচ্চ শিক্ষিত। গান এবং কবিতা চর্চার সুযোগ ছিল তাদের।

ছবির উৎস,TO ANGELO HORN

তিনি তার স্ত্রীর প্রতিও প্রেমময় ছিলেন এবং তার স্ত্রীও তাকে ভালবাসতেন। তার স্ত্রী জুবাইদাহ ছিলেন একজন বুদ্ধিমতী, মহৎ এবং গুণী নারী। স্বামীর ভাল ও খারাপ সময়ে তিনি সঙ্গে থেকেছেন।
তিনি জনহিতকর অনেক কাজও করেছেন। বিশেষ করে মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার রাস্তা তৈরি করেছেন এবং এর জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।

উৎস,
খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জিহাদের অংশ হিসেবে তিনি বহুবার সেনাবাহিনী পাঠিয়েছেন এবং অনেক বার তিনি নিজেই এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি অনেকবার ধর্মীয় তীর্থযাত্রায় গেছেন এবং পবিত্র স্থানসমূহে মূল্যবান জিনিসপত্র দান করেছেন। অনেকটা একই ধরনের কাজ করেছেন জুবাইদাহ।

তিনি মক্কা ও মদিনায় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে খাল খনন প্রকল্পে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিলেন। এই দুই শহরে যাওয়ার পথে পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করাও এই প্রকল্পের অধীনে ছিল।

জুবাইদাহ’র এই উদাহরণ সৃষ্টির পর ইসলামি রাষ্ট্রগুলোতে দাতব্য হিসেবে জনকল্যাণমূলক বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। ক্ষমতাসীন একটি পরিবারের সদস্য হওয়ার পরও জুবাইদাহ সেসময় ভাল কাজের জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটি এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করেছিল যে, পরবর্তী আরও অনেক নারী একই ধরনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের দিক থেকে দেখতে গেলে হারুনের অবদান ছিল প্রতীকী কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। হারুন ও জুবাইদাহ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা পরবর্তী মুসলিম শাসকদের জন্য বহু শতাব্দী ধরে উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে।

তাদের অবদান শুধু জনকল্যাণমূলক কাজ ও জিহাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ‘কাজী’র মতো পদ প্রতিষ্ঠাও তার শাসনের উল্লেখযোগ্য দিক।

শাসক হিসেবে হারুনের জীবনে ন্যায়বিচার, পরিবার এবং রাজনীতি অনেকটা সমান তালেই চলেছে। তাই তার শাসনের ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় দিক আলাদা করাটা কঠিন। তার বাবার মতোই তিনিও গান এবং কবিতা ভালবাসতেন। তার একজন সৎবোন ও একজন সৎভাই পেশাগত জীবনে সঙ্গীতজ্ঞ এবং কবি ছিলেন। তার কবিতা এখনো পড়া হয়।

শিল্পকর্ম ছিল নিতান্তই ব্যক্তিগত শখ। কিন্তু তার মতো ক্ষমতাবান কোন ব্যক্তির পক্ষে এর প্রচারে অবদান রাখা এবং এটি প্রদর্শন করাটা কঠিন ছিল। এমনকি তার দরবারের অভিজাতদের কাছেও।

হারুন সব ধরনের শিল্পকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। তিনি এটি টিকিয়ে রেখেছেন এবং এর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছেন। এই ঐতিহ্য পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ধরে চলেছিল।

তাই সবশেষ বিশ্লেষণে বলা যায় যে, হারুনকে স্মরণ করে যে সামাজিক মর্যাদা দেয়া হয়, সেটি তার প্রাপ্য। কারণ তিনি সভ্যতার চিরন্তন ধারণাকে জীবিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

হারুন এবং জুবাইদাহ ভবিষ্যৎ শাসকদের জন্য উদাহরণ তৈরি করেছিলেন যে, কীভাবে মহান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতার সাথে জনগণের সংযোগ স্থাপন করা যায়।

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054910182952881