গুচ্ছ ভর্তিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালুর দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেছেন ভর্তিচ্ছুরা। ২০ শিক্ষার্থীর পক্ষে গত ৮ অক্টোবর রিট আবেদন করেন তাদের আইনজীবী হামিদুল ইসলাম। রোববার (১৫ অক্টোবর) এ রিটের ওপর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা।
রিটে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, গুচ্ছ ভর্তির সব ধাপে সব ধরনের মাইগ্রেশন চালু রেখে চূড়ান্ত ভর্তি নেওয়া হয়েছে। অথচ গত ৮ ও ৯ অক্টোবর পঞ্চম ধাপে ভর্তির ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। ফলে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ও ভালো বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।
এতে আরও বলা হয়, মাইগ্রেশন বন্ধ রাখার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী মাইগ্রেশন চালু রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আদালতের দিক-নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু রেখে পঞ্চম ধাপে ভর্তি নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাসচিব, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্টার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের যথাযথ জবাব না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা রিট আবেদন করেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হওয়া নিশিতা বলেন, ‘আমি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। কোনো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমার জন্য বেশি ভালো হবে। অথচ মাইগ্রেশন বন্ধ রেখে পঞ্চম ধাপে ভর্তি নেওয়ায় আমি আর কোথাও যেতে পারছি না। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় আমার চেয়েও কম নম্বর পেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য হওয়া ভালো বিভাগে অন্যরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এখানে স্পষ্টই আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
শাহরিয়ার হোসেন শিহাব নামে আরেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাইগ্রেশন বন্ধ রাখায় আমরা হতাশ। যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগ পেয়েছি, তার চেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে, পছন্দের বিভাগে আসন ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও আমাদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। যদি মাইগ্রেশন চালু করা না হয়, তাহলে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।’
জানা গেছে, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে মাইগ্রেশন দুই ধরনের। একটি বিভাগ থেকে বিভাগে, আরেকটি এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে আপত্তি শিক্ষার্থীদের।
তবে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সদস্যরা বলছেন, চার দফায় ভর্তি নেওয়ার পরও আসন ফাঁকা থাকায় আবারও ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় থেকে দুইমাস ক্লাস চলছে। সেখানে ইনকোর্স, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু করলে অ্যাকাডেমিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য মাইগ্রেশন বন্ধ রেখে বিশেষ ধাপে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রিট হয়েছে কি না, জানি না। যদি আদালত থেকে নির্দেশনা আসে, তাহলে কমিটি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আদালত জবাব দেবো, নাকি মাইগ্রেশন পুনরায় চালু করবো— সেই সিদ্ধান্ত কমিটির বৈঠকে হবে।’