শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শিগগিরই এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এ ছাড়া গুম থেকে নাগরিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, আগামী ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের আগেই এ কনভেনশনে সই করবে সরকার।
গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাপানের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুমের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য সরকার একটা কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।’ শিগগিরই সরকার একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দেবে বলেও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আগের দিনের (মঙ্গলবার) প্রশ্নের সূত্র ধরে বলেন, ‘কালকে (মঙ্গলবার) কয়েকজন গুম নিয়ে আমার কাছে প্রশ্ন করেছিলেন। জানতে চেয়েছেন এ বিষয়ে সরকার কী করছে? আপনারা জানেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় অনেক মানুষ গুম হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব মতে, ৭০০-এর বেশি গুম হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশির এখনো কোনো হিসাব নেই। এ বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে অনেক কথা হয়েছে। বলতে পারি, এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল যে কনভেনশন আছে, সেটাতে আগের সরকার সই করেনি। আমরা এটাতে সই করব। হয়তো ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের আগেই এটা সই হবে।’
কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেবিনেটে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে কয়েকটি সংগঠনের জোর দাবিও রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় এ ধরনের একটি কমিশন রয়েছে। আমরা সেটাও বিবেচনায় নেব। ওই আদলে বাংলাদেশ কমিশন করতে পারে কি না, কেবিনেট সেটা দেখছে। খুবই শিগগিরই এটার বিষয়ে একটি ঘোষণা পাবেন।
’বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। এরপর প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
এ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশ একটি বড় পরিবার। এখানে কোনো শত্রুতা নেই এবং দেশে বৃহত্তর সম্প্রীতির ওপর জোর দেন তিনি। উভয় দূত প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করতে প্রস্তুত।
শফিকুল আলম বলেন, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে চায় সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সহযোগিতা কামনা করেন। হাইকমিশনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রেস সচিব বলেন, জাপান বাংলাদেশকে বড় আর্থিক সহযোগিতা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাপানি রাষ্টদূত বলেছেন, ড. ইউনূস যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তা জাপানের দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরে যে রিকনস্ট্রাকশন হয়েছে, সেটির সমতুল্য। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার পুনর্গঠন হবে। তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থনীতি। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনীতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে জাপানের মানুষের যে সম্পর্ক সেটি আরো মজবুত হবে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখতে চাচ্ছে ইনোভেটিভ কিছু আইডিয়া এবং রিয়েলস্টিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যবহার করতে। যাতে করে তাদের জীবন সহজ হয়। কিন্তু এ বিষয়ে মূল সমাধান হচ্ছে, তাদের ফেরত পাঠানো। যেহেতু তাদের ওখানে এখনো অস্থিরতা চলছে, তাই জাপানের কাছে আশা করছি, তাদের সাহায্য অব্যাহত থাকবে।