কাউকে না জানিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রহমগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কমিটি গঠনের নির্বাচন হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। সম্প্রতি এক তদন্তে প্রতিষ্ঠানটিতে গোপনে কমিটি গঠনের প্রমাণ মিলেছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অভিযোগ, সাবেক সুপার এম এ মান্নান নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করতে গোপনে কমিটি করে নিজেকে সভাপতি বানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন সাবেক সুপার তার ছেলেদেরকে শিক্ষক হিসেবে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিতে এমনটি করেছেন। ওই মাদরাসায় সভাপতির দুই ছেলে কর্মরত আছেন।
তবে সভাপতির দুই ছেলে কবে নিয়োগ পেয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে সুস্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করতে পারেননি মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. নজরুল ইসলাম। তার দাবি, কমিটি গঠনের অনিয়মের অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়ম মেনেই কমিটি হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে এ কমিটি গঠন করা হয় । গতবছরের ২৬ ডিসেম্বর ওই কমিটি অনুমোদনও করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছরের মাঝামাঝি ওই কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গত ২৩ আগস্ট অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আবুল কালাম সাঈদ। গত ৩০ আগস্ট অভিযোগটি তদন্ত করা হয়। তবে, সুপার নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেছেন, ডিসেম্বরে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার উল্লেখ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের দুইজন শিক্ষক জানিয়েছেন কমিটি গঠনের কোনো নোটিশ ক্লাসে জানানো হয়নি, প্রতিষ্ঠানের কোথাও ঝোলানে হয়নি। অভিভাবক ও কমিটির কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে তাদের জানানো হয়নি। প্রতিষ্ঠানের ইবতেদায়ি প্রধান পদে সভাপতির ছেলে মো. নাসির উদ্দিন ও সহকারী মৌলভী পদে তার অপর ছেলে সাইদুর রহমান কর্মরত আছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তদন্তের সময় সভাপতির দুই ছেলে ও ভারপ্রাপ্ত সুপার নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্যরা বলেছেন, বিশেষ উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত সুপার ওই কমিটি করেছেন। মাদরাসার নোটিশ খাতা ও তফসিলে শ্রেণি শিক্ষকের স্বাক্ষর ছিলো না। শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত মো. মুকুল মিয়া কমিটি গঠনের দিন অর্থাৎ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ছুটিতে ছিলেন। এতে প্রমাণিত হয়, মাদরাসায় কমিটি গঠন করা হয়নি, অন্য কোথাও কমিটি হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয় ওই মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নিয়ম কানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি এবং কমিটি অত্যন্ত গোপনে করা হয়েছে। তবে অভিযোগের অভিযোগকারী নিজে স্বাক্ষর দেননি। সহকারী মৌলভী হারুনর রশিদ অন্য কোনোভাবে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর দিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে মাদরাসার সাবেক সুপার ও সভাপতি এম এ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, ওই কমিটি সঠিকভাবে গঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন করেছেন। ওই প্রতিবেদনে যিনি শিক্ষক নন তাকে শিক্ষক ও যিনি অভিভাবক নন তাকে অভিভাবক হিসেবে দেখানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন ঠিক হয়নি দাবি করে ভারপ্রাপ্ত সুপার আরো জানান, তিনি ওই তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তবে, কমিটি গঠনের নির্বাচন কবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান গত বছরের ডিসেম্বরে। যদিও তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে বলেছেন গত বছরের ১৩ অক্টোবর এ নির্বাচন হয়েছে।
সভাপতির দুই ছেলে কবে মাদরাসায় নিয়োগে পেয়েছেন জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সেটা কাগজ দেখে বলতে হবে। এখন মনে নেই।