নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে ব্যবসায়ীদের এ সংক্রান্ত ক্রয় বা উৎপাদন খরচ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পূর্বাচলে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩’র উদ্বোধন করে দেওয়া বক্তব্যের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিরবচ্ছিন্ন চান তবে এগুলো কিনতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই মূল্য দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে? ভর্তুকি তো জনগণের পয়সায় এত বেশি দেওয়া যায় না। কাজেই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ বিষয়ে অন্তত একটু নজর দিতে হবে।’
এ সময় গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হতে আহ্বান জানান সরকার প্রধান। এ সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন রপ্তানিসহ বিভিন্ন প্যাকেজে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য বহুমুখীকরণ, খাদ্য প্রকিয়াজাতকরণ শিল্পের দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব সীমিত। কিছু এর ওপর আমরা খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এটা বহুমুখী করার কথা; আমি বারবার এ কথা বলে যাচ্ছি। বহুমুখী করা ও আমরা যত বেশি বাজার পাবো, তত বেশি আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী এ কথা আদিকাল থেকে শুনে আসছি। সেটাই আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের কর্ম ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। ’
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা মিশনে বাণিজ্যিক উইং খোলা হয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এগুলো খোলা হয়েছে যাতে করে আমরা আমাদের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করতে পারি। ’ ‘অর্থনৈতিক কূটনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসে বলে দিয়েছি- এখনকার ডিপ্লোম্যাসি পলিটিকাল না ইকোনোমিক ডিপ্লোম্যাসি হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটা দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য রপ্তানি কোন দেশে কিসের চাহিদা বেশি, কি আমরা রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর বাইরে কল-কারখানা না করার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে। এর বাইরে করলে কোনো ধরনের সেবা পাবেন না। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। এর মধ্যে অনেকগুলোর কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। এ সব অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমরা ফাইভ-জি চালু করবো। এটা সব জায়গায় দরকার নেই, এটা অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য বা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রযোজ্য। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। ’
সেবাখাত বিশেষ করে আইটি ও আইটি এনাবল সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত অর্থবছরে এই খাতে রপ্তানি আয় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইসচেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
মেলা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হয়েছে ‘২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩’। এবারে মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২ দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১ স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে; গতবার এ সংখ্যা ছিল ২২৫।
প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বাণিজ্যমেলা। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। এবারে মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। অনলাইনে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে মেলার টিকিট কেনা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো এ মেলা বসছে পূর্বাচলে। এর আগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ মেলা রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হতো। কোভিড মহামারির কারণে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এক বছর হয়নি।
মেলায় যাতায়াত সুবিধার জন্য গতবারের মতো এবারও শাটল বাস সার্ভিস রয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড হতে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। প্রয়োজনে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা।