ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার তদন্তপূর্বক বিচার এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ গ্রেফতারদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের নেতারা।
আবরার ফাহাদের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শনিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বক্তারা এসব দাবি করেন।
সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইফতেখার আলম মাসুদ বলেন, আবরারের পরিবার বা সমাজের কেউ বলতে পারেনি সে কোনো বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে সে রূঢ় স্বভাবের ছাত্রও ছিল না। কিন্তু তাকেও ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই দেশকে নব্য সাম্রাজ্যবাদীদের পদতলে রাখার জন্য এই সরকার সব কিছুই করে যাচ্ছে। তারই একটা উদাহরণ হলো আবরারের ছোট একটি ফেসবুক পোস্ট তারা সহ্য করতে পারেনি। ভারতকে কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, একটা শিক্ষার্থীকে পৈশাচিকভাবে মারা হয়েছে কিন্তু দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল তার পরিচয় বের করার চেষ্টা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল তবুও আমরা দেখছি তাদের কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। এই সরকার তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আবরারের মতো হাজার হাজার মানুষ হত্যা ও গুম করেছে। এই দানবের সংগঠনের নেতাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে না। আবরার ফাহাদকে হত্যাকারীরা দেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন।
মানুষ একটি গণ আন্দোলনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং সেই গণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশের মানুষের অধিকার ফিরে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এবং সাংবাদিক শহিদুল আলম বলেন, আপনারা সরকারের কাছে অনেক দাবি জানিয়েছেন কিন্তু আমি তাদের কাছে কোনো দাবি করি না। যার অধিকার আছে তার কাছে দাবি জানানো যায় কিন্তু এই সরকার অবৈধ সরকার, তার কাছে কোনো দাবি জানানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। এই সরকারের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া, তারা যেনো ক্ষমতা থেকে সরে যায়। আবরার মেধাবী ছিল বলে ন্যায্য কথা দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এই সরকারের সবাই মেরুদণ্ডহীন অযোগ্য, তারা ন্যায্য দাবি করতে পারে না এবং যারা এমন দাবি করে তাদের সহ্যও করতে পারে না।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, আবরার বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসনের কথা উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছিল। যার জন্য তাকে রাতভর স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভারত স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমাদের তিস্তার পানি দিচ্ছে না। এখন তো সরকার ফেনী নদীর পানিও ভারতকে দিয়ে দিচ্ছে। এটার প্রতিবাদ আমরা করতে পারিনি, আবরার করেছিল। কিন্তু তাকে তাকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি, ভারত আমাদের দেশে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল ও পাথর তোলা বন্ধ করে আমদানি করতে বাধ্য করছিল। কিন্তু আমরা আজ নিজেদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে তাদের গ্যাস রপ্তানি করছি। আবরার সেই ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে যেই আশঙ্কা করেছিল সেটাই আজকে সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। পলাশীর যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরা দেশ চালালেও ক্ষমতায় ছিল মীরজাফর। তেমনই আজকে দেশ শেখ হাসিনা চালালেও আদতে দেশের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে।
সংহতি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন— গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, লেখক ও কলামিস্ট লেখক রাহা, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, ছাত্রলীগ (জেএসডি) সভা তৌফিকুজ্জাম পিরাচা, ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আহমেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের সভাপতি নিজামউদ্দিন আল আদনান, কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আসাদ বিন রনি প্রমুখ।