চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কলেজের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ। তিনি আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শহীদ ওয়াসিমসহ জুলাই বিপ্লবে সh শহীদের স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন। বলেন, শহীদদের ত্যাগ আমাদের অঙ্গীকারে শক্তি যোগায় এবং তাদের আদর্শ আমাদের পথপ্রদর্শক। শহীদদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা আজ একটি নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বাঁচতে পারছি। তাদের স্মৃতি আমাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। শহীদদের রক্তভেজা এই বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অধিকার সুনিশ্চিত হবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে গৃহীত নীতির অধীনে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন জানিয়ে ইবনে হোসাইন জিয়াদ আরও বলেন, আমরা একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি, যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে-এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরপেক্ষ, নিরাপদ এবং রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে আসছি। শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, যা আমরা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে চিকা মারার ঘটনা ঘটে জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, এমন কার্যক্রম রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন। যা আমরা মুছে দিয়ে বিভিন্ন গ্রাফিতি আঁকার ব্যবস্থা করেছি। এরপর থেকে এই পর্যন্ত বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নামে, বেনামে সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে চেষ্টা করে যা আমাদের জন্য খুবই শঙ্কার বিষয়।
গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসের বাইরে কলেজের ছাত্রদের দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। এমন কিছু যেন না হয় সেজন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ইবনে হোসাইন জিয়াদ বলেন, ক্যাম্পাসে বারবার ছাত্ররাজনীতি চালু করার চেষ্টা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার। আমরা, চট্টগ্রাম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররাজনীতির নোংরা বাস্তবতার বিষাক্ত ছোবল বারবার প্রত্যক্ষ করেছি। এই বিষাক্ত রাজনীতির কারণে আমাদের অনেক সহপাঠী তাদের জীবনের মূল্যবান সময় হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে তার স্বপ্নের ক্যাম্পাসকে, কেউ হারিয়েছে জীবন পর্যন্ত। আমাদের বুক এখনো ব্যথায় ফেটে যায়, যখন স্মরণ করি ছাত্রলীগের বর্বর আক্রমণের সেই ভয়াল দিনগুলো। সেই নির্মম আঘাতের দগদগে ক্ষত এখনো শুকায়নি।
পরে ইবনে হোসাইন জিয়াদ পাঁচ দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো, কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা, শহীদ ওয়াসিমের নামে কলেজের কোনো বিশেষ স্থাপনার নামকরণ এবং পরিবারের পুনর্বাসনে কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা রাখা, দ্রুত হল সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা, যারা পতিত স্বৈরাচারের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং জুলাই বিপ্লবে নির্যাতনকারী হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, জুলাই বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কলেজ প্রশাসন কর্তৃক বহন করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন হামিম আব্দুল্লাহ মতিউর, সাকিবুল ইসলাম শিবলু, লুবাবা, উমামা, তানভীর।