বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের। আড়াই বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া কমিটি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই জন্ম দিচ্ছে নতুন বিতর্ক। আত্মঘাতী সংঘাত, ছাত্রী হেনস্তা, সাংবাদিক হেনস্তা, যৌন হয়রানির পর এবার আলোচনায় এসেছে দুই নেতাকে দিয়ে সভাপতির পা টেপানোর ছবি। এই অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে শিগগির নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি এবং মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তাঁদের মধ্যে রুবেল কমিটি গঠনের ছয় বছর আগে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। টিপু স্নাতক শেষ করেছেন কমিটি গঠনের তিন বছর আগে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেননি। তবে ছাত্রত্ব না থাকলেও দুজনই একটি করে কক্ষ দখলে নিয়ে আবাসিক হলে থাকছেন।
এদিকে এক বছরের জন্য গঠিত এই কমিটি সাড়ে তিন বছর ধরে রয়েছে বহাল তবিয়তে। কমিটি গঠনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, বগি রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধ করে হলভিত্তিক রাজনীতি চালু, অনুষদ কমিটি গঠনসহ অনেক প্রতিশ্রুতি দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন বছরজুড়ে। সাড়ে তিন বছরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অন্তত ১৫০ বার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারার নেতা-কর্মীরা নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। অন্য ধারার নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বলে পরিচয় দেন। এই দুটি ধারা আবার ১১টি উপদলে বিভক্ত।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারাসহ নানা ঘটনায় গত
সাড়ে তিন বছরে অন্তত ১৫০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপদল। এতে আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক নেতা-কর্মী। বহিষ্কার হয়েছেন অর্ধশতাধিক। তবে বহিষ্কারাদেশ কখনোই পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কমিটি গঠনের পরপরই শীর্ষ দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন বগিভিত্তিক রাজনীতির সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি হলভিত্তিক করবেন। এর জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল কমিটি ঘোষণা করবেন। তবে হল কমিটি ঘোষণার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি সাড়ে তিন বছরেও চোখে পড়েনি।
দুই সদস্যের কমিটি গঠনের তিন বছরের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন শীর্ষ দুই নেতা। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই পদ-বাণিজ্য, অছাত্র-বিবাহিতদের কমিটিতে রাখার অভিযোগে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন পদবঞ্চিতরা। পরে তাঁরা কমিটি পুনর্বিন্যাসের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন।
শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, বারবার বিতর্কে জড়ানোর পেছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তা অনেকাংশেই দায়ী। বারবার সংঘর্ষ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েই দায় সারছে।
শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু বকর তোহা বলেন, ‘এক বছরের কমিটি চার বছর ছুঁই ছুঁই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি বড়, তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে সব বিষয় বিবেচনা করে যেন নতুন কমিটি দেয়।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে শিগগির হল ও অনুষদ কমিটি দিয়ে দেব।’
তবে হল কমিটি না হওয়ার জন্য হলে প্রশাসন আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোকে দায়ী করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ‘হল ও অনুষদ কমিটি গঠন করতে আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে প্রশাসন আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর অপরাজনীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।’
অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ করলে সমালোচনা হবেই। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ অতি দ্রুত যথাযথ সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।