পছন্দের প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের দপ্তরে ভাঙচুর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতাকর্মীরা। পরে তারা শাটল ট্রেনের চাবি ছিনিয়ে নিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। চাবি ছিনিয়ে নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভা ছিল। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিন্ডিকেট কক্ষে এ সভা হয়। সভায় মেরিন সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে এই পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ এনে উপাচার্যের দপ্তর ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘একাকারের’ ১৫-২০ জন নেতাকর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্য দপ্তরের প্রবেশপথে বেশ কয়েকটি ফুলদানি ভাঙচুর করা হয়েছে। দপ্তরটির রান্নাঘরের প্লেট, চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে।
উপাচার্যের দপ্তরে ভাঙচুরের কথা স্বীকার করেছেন একাকারের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মঈনুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রাইয়ান আহমেদ মেরিন সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অথচ রাইয়ান আহমেদ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তার চেয়ে কম যোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মঈনুল ইসলামের দাবি, বিভিন্ন সময় যারা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া মিঠু রঞ্জন সরকারকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে খালেদা জিয়া হলের নামফলক মুছে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। তখন নাবিলা নুসরাত নামের এক শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাকেও মেরিন সায়েন্সে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্রলীগ করে আসা প্রার্থীদের বাদ দেয়া হয়েছে। তাই তার কর্মীরা সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ভাঙচুর করেছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ছাত্রলীগ কর্মীরা চাবি নেয়ায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার শাটল ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি। দিনে সাতবার নগরের বটতলী থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করে শাটল ট্রেন। এই ট্রেনে দৈনিক ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। কিন্তু বিকেলের ট্রেন ছেড়ে না যাওয়ায় বিপাকে পড়েন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে থেকে জানানো হয়েছে শাটলের চালকের কাছ থেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে চাবি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ছাত্রলীগ নেতা মঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি-জামায়াতপন্থী ও সরকারবিরোধীদের শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রতিবাদে তারা শাটল ট্রেন অবরোধ করেছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের অবরোধ চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। এ দুই পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। বিবদমান একাকার উপপক্ষ আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় বলে জানা গেছে।