নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা ২৬ বছর ধরে চলছে। এর মধ্যে ১৮ বছর কেটেছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আর আদেশ পেতে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর সোহেল চৌধুরীকে বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাম ইমন, আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী কারাগার আছেন। আসামি আদনান সিদ্দিকী, ফারুক আব্বাসী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও সেলিম খান জামিনে পলাতক আছেন।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে বিচারের জন্য পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে ১১ বছর বন্ধ ছিলো মামলার বিচার। এরপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল হলেও সে আদেশ অজ্ঞাতকারণে সাত বছর বিচারিক আদালতে না আসায় বিচার বন্ধ ছিলো।
মামলার অভিযোগ হতে জানা যায়, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুলাই ক্লাবের মধ্যে সোহেলের কথিত এক বান্ধবী নিয়ে আসামি আজিজ মোহাম্মদের সঙ্গে সোহেলের তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে সোহেল আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেদিন আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে হত্যার চেষ্টাও চালায় সোহেল। এ দুটি ঘটনার পর আসামিরা সোহেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার দিন সোহেল রাত একটার দিকে বন্ধুদের নিয়ে টমার্স ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেয়ায় তখন তিনি চলে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনাস্থালে তিনি মারা যায়।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী জানান, ট্রাইব্যুনাল মামলাটিতে বাদী নিহতের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ মোট ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মারা যাওয়ায় তার সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেনি আদালত। আদালত মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছেন। ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম আলী আহমেদ আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল।