৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে ৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪টি সরকারি কলেজ ও ১০টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টিতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী
রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া মেডিক্যাল কলেজগুলো হলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ হয়েছে।
অন্তত চারটি সরকারি কলেজের প্রশাসনও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো ইডেন মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বগুড়ার সান্তাহার সরকারি কলেজ। সান্তাহার কলেজে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ হয়েছে।
৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে (ডুজা) সংবাদ সম্মেলন করে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ৮ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে ইউনিভার্সিটি রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইউআরআই) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে যে দুজন শিক্ষার্থী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, তাঁদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। রাফিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
ইউআরআই নামের ওই প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে যে আট দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক স্থান ও একাডেমিক স্থানে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি (সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, সম্মেলন, শোভাযাত্রা, শোডাউন প্রভৃতি) নিষিদ্ধ করা হবে; কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিচয় বা সংশ্লিষ্টতা ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী উল্লিখিত স্থানগুলোতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা, কোনো সুযোগ-সুবিধা আদায় বা বিশেষ বিবেচনা লাভের প্রচেষ্টা চালাতে পারবে না; কোনো শিক্ষার্থী যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে, এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে আইন পাস করতে হবে; উল্লিখিত স্থানগুলোতে কোনো দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত পরিসরে কেউ কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলে বা নিজস্ব মত প্রকাশ করলে তাকে কোনো শাস্তির আওতাভুক্ত করা হবে না।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে ডুজা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত’ শীর্ষক জরিপের ফল প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ (ডিইউআরএস)। এতে জানানো হয়, তাদের জরিপটি ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউটের ২ হাজার ২৩৭ শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।
জরিপের ফলাফল বলছে, ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্ররাজনীতি ‘একেবারেই নিষিদ্ধ’ চেয়েছেন। সংস্কারকৃত রূপে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেছেন ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থাতেই প্রত্যাশা করেছেন শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতির ‘কোনো গুরুত্ব নেই’ বলে মত দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ডিইউআরএসের পক্ষ থেকে চারটি সুপারিশও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এগুলো হলো দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডাকসুকে পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কার করা, শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন এবং শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।