দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি : শিক্ষার্থীদের বাকিতে খেতে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যানটিনমালিক মো. শফিকুল ইসলাম। তাঁর এখন বাকির খাতা চারটি। এতে ৩০-৪০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বাকি খেয়ে নিজেরাই লিখে রেখেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি বাকি পরিশোধ করার নোটিশ দিয়েছিলেন। শফিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসে ‘শফি ভাই’ নামে পরিচিত। তিনি লিখতে জানেন না। ছাত্ররা খেয়ে নিজেরাই খাতায় লিখে রাখেন।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে বাকি দিয়ে বিপাকে পড়ে খাবার দোকানই বন্ধ করে দিয়েছিলেন মানিক হোসেন ওরফে বাবু (৩৪)। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে একটি খাবারের দোকান চালান। পরে সাবেক এক শিক্ষার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীর দেওয়া সহায়তায় তিনি দোকান খুলেছিলেন। তাঁর বাকি পড়েছিল দেড় লাখ টাকার ওপরে। এসব বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেন। গত এক বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাকি পরিশোধ করেছেন। ছাত্রলীগের বাকি খাওয়া নেতা–কর্মীদের মধ্যে মাত্র একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বাকি পরিশোধ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা মানিক হোসেনকে ‘বাবু ভাই’ বলে ডাকেন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের দোকান চালান মানিক হোসেন। অন্তত পাঁচটি হলের শিক্ষার্থীরা হলের ডাইনিং-ক্যানটিনের বাইরে তাঁর দোকানে খেয়ে থাকেন। মানিকের বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ক্যানটিন পরিচালনার দায়িত্ব পান শফিকুল ইসলাম। তখন থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা বাকিতে খেয়ে আর পরিশোধ করেননি বলে দাবি করেন তিনি। বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তিনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহীতে আসেন। বর্তমানে নগরের বিনোদপুর এলাকার মির্জাপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ছোটবেলা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় হয়েছেন। তাঁর আক্ষেপ, তাঁরা শিক্ষার্থী। দেশের অনেক বড় দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি এমন করেন, তাহলে দেশের কী হবে!
বাবুর টাকা শোধ করেছেন ছাত্রলীগের এক নেতা
মানিক হোসেন ওরফে বাবু বলেন, গত এক বছরে ছাত্রলীগের বাকি খাওয়া নেতা–কর্মীদের মধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা টাকা পরিশোধ করেছেন। ২০ হাজারের ওপরে বাকি থাকা সাত-আটজন এখনো বাকি পরিশোধ করেননি। মানিকের দাবি, ‘এখনো দেড় লাখের মতো টাকা বাকি পড়ে আছে। রুটিন করে মাঝেমধ্যেই ফোন দেন। কেউ ফোন ধরেন, কেউ খালি কেটে দেন। পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পর এক হাজার, দুই হাজার করে অল্প বাকি থাকা টাকাগুলো পেয়েছি। ১৫ থেকে ২০ হাজারের ওপরের বাকি পড়ে থাকা টাকাগুলো আর পাচ্ছি না।’
জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ঋণে পড়েছেন—এই অবস্থায় ভালো খাবার শিক্ষার্থীদের দিতে পারেন না, নিজেই স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলেও খাবার দাম বাড়াতে পারেননি। আবার অনেক টাকা বাকিও পড়ে আছে। তবে চেষ্টা করছেন, খাবারের মান যাতে বাড়ানো যায়।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে (বাবু) কল করা হলে তিনি ধরেননি। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, তিনি কমিটিতে আসার পর শফিকুল ইসলামকে ডেকে নিয়েছিলেন। বলেছেন, তিনি যেন বাকি না দেন। তিনি তালিকা দিলে হয়তো তাঁরা কাজ করতে পারবেন। শফিকুল ইসলামের কাছে খাননি, এমন ছাত্র কম পাওয়া যাবে। লোকটা অনেক যত্ন করে খাওয়ান। যাঁদের টাকা বাকি আছে, তাঁরা যেন দিয়ে দেন, সেই অনুরোধ করেন এই নেতা।