বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে তাঁর কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ওই কর্মকর্তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিলে মারধর করা হয় আনসার সদস্যসহ দু’জনকে। তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, ওই প্রকৌশলী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল আটকে রেখেছেন। ঘুষও চেয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়, বুধবার রাতে শহরের মদনের মাঠ সংলগ্ন অফিসে কাজ করছিলেন প্রকৌশলী হানিফ। ওই সময় চারটি মোটরসাইকেলে ১০ জন সেখানে যায়। তারা বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগ তুলে হানিফকে হুমকি ও গালাগাল দেয়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান ডেকেছেন জানিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। প্রকৌশলী হানিফ এতে রাজি না হলে তাঁকে জোর করে নিয়ে যেতে চায় তারা। ওই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য নিত্যনন্দ ঠেকাতে গেলে তাঁকে পিটিয়ে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেয় তারা। গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করা হয়। পরে হানিফকে শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন বটতলায় নিয়ে যায় দলটি। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা একটি কাজের বিল না দেওয়ার অভিযোগ তুলে আবু হানিফকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের জানালে ঘণ্টাখানেক পর হানিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টার দিকে ১০ জনের একটি দল কার্যালয়ে ঢুকে প্রকৌশলী হানিফকে খুঁজতে থাকে। তাঁকে না পেয়ে অন্যদের গালাগাল করে দলটি স্থান ত্যাগ করে। ফুটেজে থাকা ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে।
এদিকে প্রকৌশলী হানিফ এ ঘটনায় রাতেই বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করেননি। কারণ হিসেবে তিনি অন্ধকারে কাউকে চিনতে না পারার কথা বললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, তিনি ভয়ে নাম উল্লেখ করেননি।
প্রকৌশলী হানিফ বলেন, বটতলায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে তাদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখেছি কেন তা জানতে চায়। কিন্তু কোন কাজ বা কীসের বিল– এটা আমি সঠিক জানি না। এ সময় আমার গায়ে হাতও তোলা হয়। তবে ওই ঠিকাদার কে– এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি প্রকৌশলী হানিফ।
পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কথা বলে আবু হানিফকে ধরে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু উপসহকারী প্রকৌশলী তো ঠিকাদারি কাজের বিল দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তারা আমার কাছে আসতে পারত, অভিযোগ থাকলে বলতে পারত; কিন্তু তা না করে সরাসরি অফিসে এসে এভাবে হামলা করবে? এটি মেনে নেওয়া যায় না। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান বলেন, যে প্রকৌশলী অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েক দিন আগে তিনি আমাদের কাছে বড় অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমরা রাজি না হওয়ায়, তিনি আমাদের বিল আটকে দেন। ঘুষ না দিলে তাঁরা ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়। এর সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীও জড়িত। প্রকৌশলী হানিফকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনই তাঁকে নিয়ে গেছে। তাঁকে কোনো মারধর করা হয়নি। জোর করেও আনা হয়নি।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে– এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।