এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে হাটহাজারীতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রাসেলের (৩২) বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ (১) ধারায় বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগ এনেছেন বাদী। গত বুধবার মামলাটি করেন একই উপজেলার পূর্ব মেখল গ্রামের বাসিন্দা ওই নারী। পরে আদালত অভিযোগটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে নেয়ার জন্য হাটহাজারী থানাকে নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত আরিফুর রহমান রাসেল হাটহাজারী পৌরসভার মোহাম্মদ মিয়াজির বাড়ীর শামসুল আলমের ছেলে।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, হাটহাজারী উপজেলার পূর্ব দেওয়াননগর গ্রামের এক বাসিন্দার সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল ওই নারীর। কিন্তু পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এ সময় নিজের দুই সন্তানকে জোর করে রেখে দেন স্বামী। নিজের সন্তানকে ফিরে পেতে ওই নারী আরিফুর রহমান রাসেলের শরণাপন্ন হন।
এ সময় রাসেল স্বামীর কাছ থেকে সন্তান ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ওই নারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আসামির কথামতো বাদী উপজেলা নির্বাহী বরাবরে একটি অভিযোগ করেন। ২০১৮ সালে ১৩ই মার্চ উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় থেকে গণশুনানির (অভিযোগ নং-৩০/১৮) জন্য ডাকা হয়। পরে রাসেল তার দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা ওই নারীর কাছে দাবি করে। এ সময় আসামির কথামতো বাদীকে তার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর বাদী আসামিকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে সেখানে কফি খাইয়ে তাকে অচেতন করে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি মুঠোফোনে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। কয়েকঘণ্টা পর বাদীর জ্ঞান ফিরলে তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার হুমকি দেন। এ সময় রাসেল তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তাতে বাদী রাজি না হওয়ায় মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে আসামির কথা মতো বাদী বিভিন্ন সময় দেখা করেন। তিনি ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর থেকে গত বছরের ২৩শে জুলাই পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এ সময় আসামি তার সাথে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। পরে রাসেল ওষুধ খাইয়ে তার গর্ভপাত ঘটায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাদী বিয়ের জন্য বেশি চাপ দিতে থাকলে একপর্যায়ে রাসেল তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। এ ঘটনায় হাটহাজারী মডেল থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটে বাদী গত বছরের ৩রা ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর রাসেলের সাথে আবার যোগাযোগ করলে সে সমস্ত সম্পর্ক অস্বীকার করে।
এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুল রহমান রাসেল মুঠোফোন বলেন, এই মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওই মামলার বাদীনিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। আমি মনে করি আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। তবে শিগগিরই এর মুখোশ উন্মোচন করা হবে।
মামলাটি এফআইআর হিসেবে নেয়ার জন্য হাটহাজারী থানাকে নির্দেশ দেন এমন প্রশ্নে হাটহাজারী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে এখনো পর্যন্ত ওই ধরনের কোনো কাগজপত্র এসে পৌঁছায়নি। পেলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।