বাগেরহাটের ফকিরহাটে ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় ৪০ হাজার টাকায় আপস-রফা করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনার দুদিন পর স্থানীয়ভাবে সালিশের নামে ধর্ষকের বাড়ির সামনের রাস্তায় ডেকে নিয়ে ওই কিশোরীর বাবার কাছ থেকে ফাঁকা (কিছু না লেখা) স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় তারা।
ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায় ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ুন মোড়ল ও কামরানের চাপে রোববার বেলা ১১টার দিকে অভিযুক্তের বাড়ির সামনের রাস্তায় সালিশ বৈঠক হয়। সেখানেই জোর করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়ের বাবার হাতে ৪০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
হুমায়ুন মোড়ল বেতাগা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক।
নিরাপত্তার কারণে ওই স্কুল ছাত্রীকে এলাকার বাইরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়েছে তার পরিবার। সেখান থেকে গতকাল সোমবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় প্রভাব ও পারিপার্শ্বিক চাপে রাতে বাড়ি থাকতে পারছেন না জানিয়ে ওই কিশোরীর বাবা মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, আমি দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালাই। গত বৃহস্পতিবার কাজের কারণে বাগেরহাটে ছিলাম। আমার বাড়িতে না থাকার সুযোগে ওই রাতে প্রতিবেশি গৌরঙ্গ দাস (৩২) আমার মেয়েকে অচেতন করে ঘরের জানালা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ভোর রাতে মেয়েকে বাড়ির পাশের একটি পুকুর সংলগ্ন বাগানে খুঁজে পায় পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা যুবক গৌরঙ্গের একাধিক বিয়ে আছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের উত্যক্ত করাসহ নানা অভিযোগও রয়েছে।
পরদিন শুক্রবার সকাল থেকেই ছাত্রী ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তোড়জোড় শুরু করে স্থানীয়ভাবে বিএনপি নেতা পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তি। তাদের মাঝে ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ুন মোড়ল ও কামরানের চাপে রোববার বেলা ১১টার দিকে ধর্ষকের বাড়ির সামনের রাস্তায় সালিশ বৈঠক হয়। সেখানেই জোর করে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মেয়ের বাবার হাতে ৪০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই কিশোরীর বাবা বলেন, হুমায়ুন মোড়ল ও কামরান মিলে মেয়েকে ধর্ষণের বিষয়টি মিট-মীমাংসা করে। প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে। পরে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে ৪০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘আতঙ্কে আমি বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছি না। আমারে অন্যরা বলতিছে, তুমি বাড়িঘরে থাইওনা, বাজার ঘাটে উইটো না। আমি আবার স্ট্যাম্পের একটা ফটোকপি একজনরে দিয়ে আনতি পাঠাইছিলাম, কিন্তু তারা বলিছে, দেওয়া যাবে না। এখন আমার এহানে (এলাকায়) থাহা ডাও নিরাপদ না। কাদের ভয়ে এলাকায় নিরাপদ মনে করছেন না প্রশ্ন করলেও আতঙ্কে কিছু বলতে চাননি তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা হুমায়ুন মোড়লের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কে বলিছে আপনারে। অভিযোগকারীর কাছে খোঁজ করেন, সেটা আমারে বলে কোন প্রয়োজন আছে। আমি কিছু জানি না।’ বলে ফোন কেটে দেন।
জানতে চাইলে ফকিরহাট থানার ওসি আশরাফুল আলম মুঠোফোনে বলেন, এখনও এ ধরনের কোন অভিযোগ কেউ করেনি। তাদের নির্ভয়ে থানায় আসতে বলেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।