কুষ্টিয়ার শহরের আড়ুয়াপাড়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীর সাথে এক শিক্ষকের অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তারই প্রতিবাদে শিক্ষক ও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রাও।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। তাদের অভিযোগ ওই স্কুলের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল কাফি প্রায়শ: ছাত্রীদের সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলত। দিনের পর দিন এভাবেই চলে আসছিল। আর তা মুখ বুজে সহ্যও করে আসছিলেন ছাত্রীরা। কিন্তু সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল কাফির অশোভন আচরণের মাত্রাটাও যেন বেড়ে যায় অনেকই।
তাই এক ছাত্রী এনিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে হাবীবা শান্তার কাছে অভিযোগ দেন ওই সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও পরবর্তিতে প্রধান শিক্ষিকা শিক্ষকের পক্ষেই কথা বলেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের সাফ জানিয়ে দেন এনিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ছাড়পত্র দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হবে। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ যেন আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পেড়েছেন। সড়ক বন্ধ করে অভিযুক্ত শিক্ষক এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবীবা শান্তার অপসারন দাবী করে বিক্ষোভ করেন।
এবিষয়ে শিক্ষার্থী তাইয়্যেবা তাসমিন জানান সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল কাফী তার ক্লাবে মেয়েদের উদ্দেশ্যে করে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেন। দিনের পর দিন ওই শিক্ষকের এমন আচরণের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। তাই এবিষয়ে আমাদের এক সহপাঠী প্রধান শিক্ষিকার কাছে অভিযোগ দেয়।
প্রথমে প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও পরে উল্টো শিক্ষকের পক্ষেই অবস্থান নেন তিনি। এক পর্যায়ে যেসব শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাদেরকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বেরকরে দেয়ারও হুঁশিয়ারী দেন প্রধান শিক্ষিকা। তাই শুধু অভিযুক্ত শিক্ষক নন, প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ দাবীতেও আমরা রাস্তায় নেমেছি।
একই অভিযোগ সোনালী আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীরও। তিনি দাবী করেন অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
তারা বলেন, সম্প্রতি ভূক্তভোগী এক শিক্ষার্থী এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিার কাছে অভিযোগ দিলেও তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থা নেন প্রধান শিক্ষিকা উম্মে হাবীবা শান্তা। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারী দেন। তাই বাধ্য হয়ে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগ দাবী করে মাঠে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া তন্বি আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের আচরন দেখে শিক্ষা নেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি ছাত্রীদের সাথে এমন অশোভন আচরণ করে থাকেন তাহলে তা অত্যন্তত দু:খজনক। তিনি অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের গভর্ণিং বডির সাবেক সভাপতি আলমগীর আলম জানান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল কাফির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে তা দুঃখজনক। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কর্তৃপক্ষ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল কাফী বিক্ষোভের সময় ছিলেন না বিদ্যালয়ে। তার মুঠোফোনও বন্ধ ছিল। তবে বিদ্যালয়ে না থাকলেও মুঠোফোনে পাওয়া যায় প্রধান শিক্ষিকা উম্মে হাবীবা শান্তা। তিনি দাবী করেন শিক্ষক কাফির বিরুদ্ধে যতটা অভিযোগ শোনা যাচ্ছে ততটা নয়। তবে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও তিনি জানান।