ক্যাম্পাসে নবনির্মিত ছাত্রী হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, যে হলটা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, এটার জন্য আমার মনটা খুবই খারাপ। আমরা তাদেরকে অনেক টাকা দিয়েছি। একই টাকা দিয়ে, একই রেটে ঢাকাতেও ভবন হচ্ছে, কাজ হচ্ছে, রেট কিন্তু সমান। কিন্তু আমাদের এখানে তারা নিম্নমানের কাজটা করেছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে নির্মিত গাড়ি পার্কিং জোন উদ্বোধনকালে এসব মন্তব্য করেন উপাচার্য।
উপাচার্য আরও বলেন, এখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রোডাক্ট, দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের মধ্যে অনেক ভালো প্রোডাক্ট আছে, অনেক ভিন্নতা আছে, কিন্তু ওরা সবচেয়ে খারাপ, নিম্নমানের জিনিসটা এখানে নিয়ে আসে, ব্যবহার করে। তারা কিসের জন্য এটা করে? কারণ তারা এখান থেকে টাকা সেভ করে ভাগাভাগি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বের কাজগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাজগুলো হয়েছে এরমধ্যে ইউনিভার্সিটি সেন্টারসহ অনেক কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি। যার জন্য আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বাজেটগুলো দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। কনস্ট্রাকশন বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের জন্য তারা আমাদের টাকা দেয় না। তারা শুধু শিক্ষা-গবেষণা এবং শিক্ষকদের বেতন ভাতার জন্য টাকা দেয়। আমরা জোর করে, চাপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ওই উন্নয়নের টাকাগুলো নিয়ে আসি। তবে টাকাগুলো আমরা যেভাবে এনেছি, যেভাবে খরচ করার কথা ছিল, সেভাবে করতে পারিনি।
দুঃখ প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, আমরা টাকাগুলো দিয়ে অনেক বেশি কিছু করতে পারতাম। কিন্তু দুইগুণ, তিনগুণ, চারগুণ বেশি টাকাটা খরচ হয়ে যাচ্ছে, যেটা আসলে লাগার কথা ছিল না। গাড়ি পার্কিং জোনগুলোতে যেভাবে আমরা টাকাগুলো খরচ করতে পেরেছি, কাজে লাগাতে পেরেছি, কিন্তু ওগুলোতে আমরা তা পারিনি।
নতুন হলের অবকাঠামোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হলের যেখানে যে রুমগুলো বানানো হয়েছে, আমি, আপনি, কেউ এমন রুম বানাতাম না। এক রুমে চারটা মেয়ে থাকবে। একেবারে গাদাগাদি করে থাকতে হবে। আমাদের জায়গার অভাব ছিল না। প্রয়োজনে আমরা ৫০ জন মেয়ে কম রাখতাম, কমফোর্টভাবে থাকতে পারবে ওইভাবে। তারা এমনভাবে করে রেখেছে, কষ্ট হবে। তারপরও তারা খুশি, অনেক খুশি, উচ্ছ্বসিত, নতুন হল, নতুন পরিবেশ।
আগামী দিনের কাজগুলো নিয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন থেকে যে কাজগুলো হবে, সেগুলোর গুণগত মান ঠিক রেখে করা হবে। আগে থেকে সব প্ল্যান করা থাকবে, কোন ধরনের জিনিস আমরা ব্যবহার করবো তা আগে থেকেই লেখা থাকবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি সর্বোচ্চ মানের জিনিস দিতে হবে।
এর আগে, গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত টেনিস কোর্ট উদ্বোধনকালে সেটির কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন উপাচার্য। তখন তিনি বলেন, যে মানের চেয়েছিলাম সেই মানের পাইনি। যেটা হয়ে গেছে হয়ে গেছে, যে ধরনের ভুল ত্রুটি এখানে হয়ে গেছে এটা যাতে সংশোধন করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। ওই টেনিস কোর্টটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ৫০ লাখ ১০ হাজার ৮৭২টাকা। কাজের গুণগত মান নিয়ে একাধিকবার অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করার পরও সন্তোষজনক কাজ করাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ দেরিতে হস্তান্তর করায় সংশ্লিষ্টদের কাজ নিয়ে প্রশ্নও তুলেন উপাচার্য।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রীদের জন্য ৪৮০ আসন বিশিষ্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত এ হলটি ২৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় সম্পন্ন হয়।