মোটরবাইক কিনতে আসা এক বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে থেকে দশ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী নুর উদ্দীন আহমেদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুনতাসীর। তারা দুজনই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নুর উদ্দীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও আবদুল্লাহ আল মুনতাসীর শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের সহ সভাপতি। দুইজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। এ ঘটনায় একজন আসামি পলাতক রয়েছেন। তার নাম মো. রাজীব।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের পশ্চিম পাশে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে ছিনতাইয়ের শিকার ওই ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করে আটক দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে ভুক্তভোগী বিক্রয়কর্মীর নাম জুবায়ের আহমেদ। তিনি পল্টন সিটি হার্ট মার্কেটের রংধনু ফ্যাশন নামক একটি দোকানে কর্মরত।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী রিফাত রিমন নামে তার পরিচিত এক ব্যক্তির সূত্রে একটি ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যান। কিন্তু মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে দেরি হওয়ায় তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের পশ্চিম পাশে নুর উদ্দীন আহমেদ এবং আবদুল্লাহ আল মুনতাসীরসহ তাদের অপর আরো একজন সহযোগী মিলে তাকে ঘিরে ধারেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে তার কাছে যা কিছু আছে বের করে দিতে বলেন। এ সময় দিতে অস্বীকার করলে ভুক্তভোগীর মাথায় ও মুখে কিলঘুষি দিয়ে আহত করে এবং প্যান্টের পেছনের পকেটে রাখা মানিব্যাগ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এজহারে জুবায়ের আহমেদ আরো বলেন, মুনতাসির তার মোবাইল দিয়ে ভুক্তভোগীর ছবি তোলে এবং আমার বাবার মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন করে। কিন্তু কথা না বলে কেটে দেয়। তার বাবা ফোন ব্যাক করলে আমি আসামি মুনতাসির এর মোবাইল স্ক্রিনে আমার বাবার মোবাইল নম্বর দেখতে পাই। তারপর তারা আমাকে চড় থাপ্পর মেরে চলে যাওয়ার সময় আমি তাদের পা ধরে আমার টাকা ফেরত চাইলে তাহারা ৫ হাজার টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দ্রুত চলে যায়। তারপর ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনা জানালে তাৎক্ষণিক শাহবাগ থানার এস আই মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আসলে ঘটনার বিস্তারিত জানান ভুক্তভোগী।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভুক্তভোগীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে আরো টাকা দেয়ার লোভ দেখানো হলে পরে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তারা টাকা নিতে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে আসতে বলা হলে তারা আসেন। এরপর তাদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তাদের দুইজনের প্যান্টের পকেট থেকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ছিনতাইয়ের শিকার ওই ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আটক দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় রাজিব নামের আরো এক শিক্ষার্থী জড়িত। পালিয়ে যাওয়ায় তাকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।
এদিকে সার্বিক বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাত্রলীগ এখন স্মার্ট রাজনীতি করে। ছাত্রলীগ কখনো অপরাধকে প্রশ্রয় দেবে না এবং অপরাধীকেও না। ছাত্রলীগের আচরণবিধি ভঙ্গ করে অপরাধ করলে আমরাও যে কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া কেউ অপরাধ করলে প্রশাসন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আমারাও এটা প্রত্যাশা করি।